নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে যোগ দিতে খানজাহান আলী থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকা পথে যাত্রা শুরু করেছেন। পরিবহণ ধর্মঘট, পুলিশি চেকপোস্ট, ক্ষমতাসীনদের পাহারা ও পথে পথে বাধা—হয়রানির আশঙ্কায় তারা আগেভাগেই রাজধানীতে ঢুকে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিচ্ছেন। পুলিশি নজরদারি এড়িয়ে ঢাকায় ঢুকতে বিভিন্ন কৌশল বেছে নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেকে রোগী সেজে ঢাকায় এসেছেন বলেও স্বীকার করেছেন। এজন্য তারা স্থানীয় চিকিৎসকদের রেফারেন্স ও প্রেসক্রিপশন সঙ্গে রাখছেন। এদের অনেকে বাস—ট্রেন—লঞ্চসহ বিভিন্ন গণপরিবহণ ব্যবহার করলেও সামর্থ্যবান নেতাকর্মীরা অ্যাম্বুলেন্স কিংবা নিজস্ব যানবাহন ব্যবহার করছেন। রোগীর অ্যাটেনডেন্ট পরিচয় দিয়ে সঙ্গে দলীয় ২—৩ জন কর্মী নিয়ে ঢাকায় ঢুকছেন।মহাসমাবেশের পর নেতাকর্মীদের ঢাকায় রেখে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা শুনে অনেকে পরিবার—পরিজন নিয়ে ঢাকামুখী হচ্ছেন। এজন্য তারা আত্মীয়—স্বজনের বাড়ি বেড়ানোর কৌশল মাথায় নিয়ে স্ত্রী —সন্তানদেরও সঙ্গে নিচ্ছেন। ঢাকার কোথায়, কোনো আত্মীয়ের বাড়ি অবস্থান করবেন তা আগেভাগে ঠিক করে রাখছেন। তাদের ঢাকায় আসার বিষয়টিও আত্মীয়—স্বজনদের আগেই জানিয়ে দিচ্ছেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তাদের টেলিফোন নম্বর দেওয়া হলে তারা যেন বিষয়টি জানাতে পারেন।এদিকে ঢাকায় আসতে বিএনপি নেতাকর্মীরা অনেকে ভোল পাল্টে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী সেজেছেন। তাদের এ কৌশলের কথা অনেকে নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন। তারা জানান, ঢাকামুখী হওয়ার আগে তারা তাদের স্মার্ট ফোন থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোন নম্বর, তাদের সঙ্গের স্থিরচিত্র—ভিডিও সরিয়ে ফেলেছেন। এর পরিবর্তে সেখানে বেশকিছু আওয়ামী লীগ নেতার ফোন নম্বর ও তাদের বিভিন্ন কর্মসূচির স্থিরচিত্র—ভিডিও আপলোড করে নিয়েছেন। অনেকের মোবাইল ফোনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কিংবা দলের প্রথম সারির নেতার ছবি স্ক্রিন পিকচার করে ঢাকামুখী হয়েছেন। খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী রিকশাচালক ও দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমিকের ছদ্মবেশে ঢুকে দীর্ঘমেয়াদে ঢাকায় অবস্থানের কৌশল নিয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রিকশার গ্যারেজে চালকদের থাকা—খাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় তারা নির্বিঘ্নে সেখানে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ আত্মীয়—স্বজনের বাসাবাড়ি, বস্তি কিংবা মেসে থাকছেন। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ও পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকে সরাসরি ঢাকায় না ঢুকে আগামী আরও এক—দুই দিন উপকণ্ঠ এলাকায় অবস্থানের কৌশল নিয়েছেন। তারা কেউ নারায়ণগঞ্জ, কেউ গাজীপুর—টঙ্গী, কেউবা কেরানীগঞ্জ কিংবা সাভার—আশুলিয়ায় অবস্থান করছেন। যাতে ২৮ অক্টোবর প্রয়োজনে হেঁটেই ঢাকায় ঢুকতে পারেন।
ঢাকায় যাওয়ার পথে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের ঢাকার মহাসমাবেশে আসার পথে চেকপোস্টে পুলিশ মোবাইল চেক করেছে। তাই এবার তারা ফোন থেকে সব ছবি, তথ্য ডিলিট করে দিয়েছেন। ছাত্রদল কর্মী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এর আগেও কয়েকটি জেলায় বিএনপির সমাবেশে গিয়েছি। তাই ফোনে অনেক ছবি ছিল। ঢাকায় আসার পথে সব ছবি ডিলিট করে ফেলেছি। অনেকে মাঝপথেই তাদের ছবি ও ফাইলগুলো বাসায় থাকা আত্মীয়, পরিবারের কাছে পাঠিয়ে তারপর ডিলিট করেছেন। যাতে পরে আবার সেগুলো পাওয়া যায়।’অপর ছাত্রদল কর্মী নিলয় জানান, তারা তিন বন্ধু শনিবার রাতে ঢাকায় এসেছেন। রওনা দেওয়ার আগেই দলীয় নেতাদের কাছ থেকে মোবাইল চেকের বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন।সেজন্য আগেই বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি ও ৭ মার্চের ভাষণের ফাইল ডাউনলোড করে রেখেছিলেন। বাসে ওঠার পর সঙ্গীয় যাত্রী ও ড্রাইভার—হেলপারদের কাছে নিজেদের আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তারা দলের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় যাচ্ছেন এ কথা জাহির করতে কৌশলে নানা গল্প শুনিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খানজাহান আলী থানা বিএনপির আহবায়ক কাজী মিজানুর রহমান বলেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকায় সমাবেশে যোগদান করাই হলো আমাদের টার্গেট সেটা যে কৌশলেই হোক না কেন। তবে নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে অনেকেই ঢাকায় চলে গেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন এবং অনেকটা কৌশল করেই ঢাকাতে অবস্থান করছে বলে জানান এ বিএনপি নেতা।
0 মন্তব্যসমূহ