Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

অভিনব কায়দায় বাড়ছে ভিশিং, ভুক্তভোগীরা জানেও না যে, তাদের করনীয় কি?



ছবিঃ ইন্টারনেট


বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থা এমন যে, ঘরে ঘরে মানুষ, হাতে হাতে মোবাইল ফোন। আর এই মোবাইল ফোনকে কাজে লাগিয়েই একটি প্রতারক চক্র প্রতিনিয়ত মানুষকে হয়রানি করে যাচ্ছে। বয়স ভেদে, স্থান ভেদে এই হয়রানির ধরন আবার ভিন্ন ভিন্ন। একজন যুবককে যেভাবে ফাঁদে ফেলা হয়, একজন বৃদ্ধকে সেভাবে ফাঁদে ফেলা হয় না। আবার একজন বৃদ্ধকে যেভাবে ফাঁদে ফেলা হয়, এজন নারীকে সেভাবে ফাঁদে ফেলা হয় না।

একটা সময় ছিল যখন প্রতারকেরা কল করে বলত “বিকাশ থেকে অমুক বলছি। খুব শীঘ্রই আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়া হবে। আপনার অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় রাখতে চাইলে আমাদের কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন।” কেউ হয়তো অন্যভাবে কথাটা উপস্থাপন করত তবে মূল কথা ঐ একই। মানুষকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে বিকাশ থেকে টাকা লুফে নিতো। বিকাশের অনেকদিনের চেষ্টার ফলে প্রতারণার এই রাস্তাটা এখন অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে থেমে যায়নি প্রতারক চক্র। অভিনব কায়দায় মানুষকে তাদের প্রতারণার জালে ফেলছে।

একটি চক্র আছে, যারা মানুষকে ফোন করে বলে, “আমি জ্বীনের বাদশা বলছি...” অথবা হয়তো বলে “আমি অমুক দরবার শরিফ থেকে বলছি...”। এই চক্রটি মানুষকে একটি অলৌকিক গল্প শুনিয়ে কিংবা পীর বাবার ভয় দেখিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে। এরা বহুদিন ধরেই এই কাজটি করছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। শুধু যে সহজ-সরল মানুষ এদের ফাঁদে পা দিচ্ছে ব্যাপারটা তা নয়। অনেক চতুর লোকও এদের ফাঁদে পড়েছে। হ্যাঁ চতুর লোক বটে, তবে সচেতন লোক কিন্তু নয়। যারা সচেতন মানুষ, তারা কখনোই এসবে বিশ্বাস করেন না, এবং এদের ফাঁদে পড়েনও না।

আরেকটি চক্র আছে যারা মানুষকে ফোন করে বলে, “আপনি ১ কোটি টাকার একটি লটারি জিতেছেন...”। এই চক্রটি মূলত মানুষকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রতারিত করে। তারা বলে যে, আপনি বড় একটি সংখ্যার টাকা পাবেন, তবে টাকাটা নিতে হলে আপনাকে অগ্রীম কিছু টাকা তাদেরকে দিতে হবে। এই বলে তারা আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাবে।

অনলাইনে, অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো প্রতারণার হাজারটা সুযোগ। মজার ব্যাপার হলো, এখানে অশিক্ষিত লোক যতটা প্রতারিত হয়, শিক্ষিত লোক তার চেয়ে বেশি প্রতারিত হয়। একটি চক্র রয়েছে যারা আপনাকে চাকরি দেয়ার কথা বলবে। টাকাও নিবে, অতঃপর উধাও হয়ে যাবে। কেউ কেউ আছে যারা আপনার কাছে একটি পণ্য বিক্রি করার কথা বলবে, আপনার কাছ থেকে টাকাও নিবে, তারপর উধাও হয়ে যাবে।

ভিশিংয়ের একটি নতুন কৌশল বলি, যেটা আমি নিজে দেখেছি। কিছুদিন আগে আমার এক দাদিকে একজন ভদ্রলোক কাঁদোকাঁদো গলায় ফোন করে বললেন- ‘চাঁচি, আপনার ছেলে কি ঢাকায় থাকে?’
দাদি- ‘হ্যাঁ।’
-‘কি করেন উনি?’
-‘গার্মেন্টসে চাকরি করেন’
-‘চাচিঁ একটা মারাত্মক দুঃসংবাদ আছে। আপনার পোলা তো বাসা থেইকা গার্মেন্টসে যাওয়ার পথে ট্রাকের নিচে পড়ছিলো। আমি তারে ধইরা-টইরা হাসপাতালে নিয়া আসছি। এখন ভর্তি করতেই ১০ হাজার টাকা লাগবে। আমার কাছে একটা টাকাও নাই চাচিঁ। আপনে তাড়াতাড়ি এই নাম্বারে ১০ হাজার টাকা পাঠান, বাকিটা আমি ম্যানেজ করতেছি।’

এই ভদ্রলোক যে আমার দাদিকে এত বড় মিথ্যা বলে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে সে কথা অনেকে বিশ্বাসও করতে চায় না। কারণ পৃথিবীতে এখনো অনেক ভাল মানুষ আছেন, তারা এত বড় পাপ কল্পনাও করতে জানেন না। তারা হয়তো এটাও জানেন না যে, এত এত ভাবে মানুষ ভিশিংয়ের শিকার হচ্ছে। সুতারং ভিশিংয়ের শিকার হলে করনীয় কি, সে ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা না থাকাই স্বাভাবিক। তাই আসুন আমরা জেনে নেই, এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে অর্থাৎ ভিশিং প্রতিরোধে আমরা কি কি কাজ করতে পারি।

১. সচেতনতা বৃদ্ধিঃ- ভিশিং অনেকটা ঝড়ের মতো। হঠাৎ করেই আপনার মোবাইলে কল আসবে, আর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি প্রতারিত হয়ে যাবেন। তাই এর থেকে বাঁচতে হলে সবার আগে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নিজে সচেতন হতে হবে, অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। মোবাইলের মাধ্যমে কাউকে টাকা পাঠানোর আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, “আমি কাকে টাকা পাঠাচ্ছি? কেন পাঠাচ্ছি? এই লেনদেনের কোনো প্রমাণ কি আমার কাছে আছে?”

২. স্থানীয় থানাঃ- যদি কখনো আপনি, অথবা আপনার পরিচিত কেউ কোনোভাবে এই ভিশিংয়ের শিকার হন তবে আপনার ফোনের কথোপকথন, কিংবা লেনদেনের প্রমাণ সহ স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করবেন। সেখান থেকেই আপনি আপনার প্রাথমিক সমাধান পেয়ে যাবেন। তবে হ্যাঁ, থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে অনেক ধরনের মামলা থাকার ফলে আপনার সমস্যাটির সমাধান পেতে একটু বেগ পেতে হতেও পারে।

৩. হ্যালোসিটি অ্যাপঃ- সাইবার সহায়তা প্রদান করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার মধ্যে এটি অন্যতম একটি। আপনি প্লে-স্টোর কিংবা অ্যাপ-স্টোর থেকে সরাসরি ইন্সটল করে নিতে পারেন “হ্যালো সিটি অ্যাপ”। এই অ্যাপের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আপনি আপনার স্থানীয় সাইবার ট্রাইবুনালে অভিযোগ করতে পারেন। তাছাড়া এখানে আপনি স্বাধীন ভাবে আপনার কথাগুলো জানাতে পারেন। বেশিরভাগ সময়ই এখানে করা অভিযোগের ব্যাপারে কাউকেই কিছু জানানো হয় না। এমনকি যদি আপনার পরিবারকেও জানানোর প্রয়োজন না পড়ে তবে তারাও এ ব্যাপারে পুলিশের তরফ থেকে কিছু জানতে পারবে না। তাই এখানে সাইবার সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন খুব সহজেই।

৪. Cyber Security & Crime Division, CTTC, DMP- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল কতৃক পরিচালিত এই ফেইসবুক গ্রুপ থেকেও পেয়ে যেতে পারেন আপনার সমস্যার সমাধান। তাছাড়া আপনি ফোনে কিংবা ইমেইলের মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারেন এই সেলের সাথে।
Phone- 01769691522
Email- cyberhelp@dmp.gov.bd

৫. PCSW- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের একটি হেল্প ডেক্সের নাম Police Cyber Support for Women (PCSW). এখান থেকে মূলত নারীদের সাইবার সহায়তা প্রদান করার জন্যই ২৪/৭ সেবা প্রদান করা হয়। যেকোনো নারী সাইবার অপরাধীদের কবলে পড়লে যোগাযোগ করতে পারেন এই শক্তিশালী টীমের সাথে।
Phone- 01320000888
Email- cybersupport.woman@police.gov.bd

শেষ কথাঃ- ভিশিংয়ের নিত্যনতুন রুপ বের হয়। প্রতারকেরা যাকে যেভাবে পারে তাকে সেভাবে প্রতারিত করেন। তাই এর হাত থেকে বাঁচতে হলে সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে এবং পাশাপাশি অন্যদেরকেও সচেতন করতে হবে। এরকম প্রতারণার শিকার হলে চুপচাপ ঘরে বসে থাকা যাবেনা, প্রতিবাদ করতে হবে, আইনের আশ্রয় নিতে হবে। এভাবেই গড়ে তুলতে হবে আমাদের নিরাপদ সাইবার জগৎ, পৌঁছাতে হবে স্বপ্নের সেই ডিজিটাল বাংলাদেশে।

সাব্বির হোসেন,
প্রশিক্ষক, ইসলামিক সাইবার সিকিউরিটি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

রামপাল

5/রামপাল/feat-tab

সাম্প্রতিক

5/সাম্প্রতিক/feat-tab

বাগেরহাট

5/বাগেরহাট/feat-tab

Facebook

Search This Blog

এখানে সার্চ করুন

জাতীয়

4/জাতীয়/grid-big

রাজনীতি

6/রাজনীতি/grid-small

সংবাদ শিরোনাম


Ads

Ads

Ads

Ads

Ads

Ads

সর্বশেষ

3/recent/post-list

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক/feat-big