সাইফুল্লাহ তারেক, আটরা গিলাতলা প্রতিনিধিঃ বর্তমানে ভারতে চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল)। আইপিএল মানেই ক্রিকেট জুয়ারুদের ভরা মৌসুম। খেলা শুরু হলেই টিভির সামনে দেখা যায় জুয়ারুদের আনাগোনা। ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি—টুয়েন্টি ফরম্যাটের এ খেলাকে নিয়ে চলছে হরেক রকম বাজি বা জুয়া। আগে কেবল শহর এলাকায় ক্রিকেট জুয়ার বাজি ধরতে দেখা গেলেও এখন তা মহামারির মতো প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।যারা নিরক্ষর তারাই বাজি ধরছেন আইপিএল, বিপিএল কিংবা যেকোনো ক্রিকেট খেলায়। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরছেন জুয়ারুরা। নব্য এই ক্রিকেট জুয়ার নেশায় পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়ে অনেকেই এখন সর্বশান্ত। জানা যায়, নির্দিষ্ট কোন বলে উইকেট পড়বে, সিঙ্গেল না ডাবল রান হবে, নাকি বাউন্ডারি হবে? কোনো ওভারে ১০ রানের কম বা বেশি হবে কি না, কিংবা কোন বলে উইকেট পড়বে? ইনিংসে রানের পরিমাণ কিংবা খেলার ফলের ওপর ধরা হচ্ছে বাজি। ম্যাচে ভালো দলের পক্ষে বাজির হারও বেশি হয়। দরও বেশি ওঠে। ভালো দল হারলে টাকা যেমন বেশি যায়, তেমনি খারাপ দল জিতলে বেশি টাকা আসে। চলতি আইপিএল নিয়ে বাজির বিষয়ে কয়েকজন জুয়ারীদের কাছ থেকে এমনটিই জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর খানজাহান আলী থানা এলাকার গিলাতলা এলাকার এক আইপিএল জুয়াড়ি জানান, আইপিএল কে কেন্দ্র করে খানজাহান আলী থানার প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি স্পটে চলছে জমজমাট জুয়া বাণিজ্য। আইপিএলের মতো বিপিএলের বিগত আসরগুলোতেও ক্রিকেট জুয়া খেলে অনেকে পথে বসেছেন। আবার অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, অনেকে আবার নামি—দামী কোম্পানীর দামী মোবাইল সেট কিনছেন, কেউ বা আবার জুয়ায় জেতা টাকা খরচ করছে দু হাতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খানজাহান আলী থানা এলাকার বিভিন্ন এলাকায় চলছে আইপিএল জুয়া। হাট—বাজার থেকে শুরু করে পাড়া—মহল্লার চায়ের দোকান, সেলুন, বাসা—বাড়ি এমন কি যেখানেই টিভি সেখানেই চলছে বাজি ধরা। ফলে ক্রিকেট জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে স্কুল পড়ুয়াদের থেকে শুরু করে যুবসমাজ এমনকি মধ্যবয়স্করাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ম্যাচে জয়—পরাজয়, এক ওভারে কত রান, কোন বলে কী হবে, কোন খেলোয়াড় কেমন খেলবে এমন সব কিছুর ওপরই হচ্ছে জুয়া। প্রতিদিন সন্ধ্যায় টিভির পর্দার সামনে খেলার দর্শকের মধ্যে যে ভিড় দেখা যায়, এর প্রায় প্রতিটিই ছোটখাটো জুয়ার আসর। চায়ের দোকান ও চুল—দাড়ি কাটার সেলুনগুলোর এসব ছোটখাটো আসরে পুরো ম্যাচের জয়—পরাজয়ের ক্ষেত্রে একেক ধরনের রেট রয়েছে। তবে সাধারণত ফেবারিট দলের পক্ষে দেড় হাজার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের পক্ষে এক হাজার টাকা ধরে খেলার প্রচলনই বেশি। মাঝারি মাপের জুয়ায় ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা রেট দেওয়া হচ্ছে। কেবল ম্যাচে হারজিত নিয়েই বাজি নয়, প্রতি ওভারে ওভারে— এমনকি বলে বলে বাজি ধরছেন ছোট—বড় বাজিকররা। রাস্তার মোড়ের দোকানগুলোতেই বেশি হচ্ছে এ খেলা। জুয়ার টাকা যোগান দিতে কেউ কেউ দামি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল ও সোনার গহনাসহ নানা দামি জিনিসপত্র বন্ধক রাখছে। আর সুদের ব্যবসায়ীরাও থাকছেন জুয়ার আসরের পাশেই। শুধু তাই নয়, এখন অনলাইন বেটিং সাইটগুলোতেও দিব্যি চলছে এমন জুয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জুয়াড়ি বলেন, চলতি আইপিএলে জুয়া খেলে অনেকে পথে বসেছে। ঘরে বসেই এখন মোবাইলে এ জুয়ায় অংশ নেওয়া যায়। ফলে এ জুয়া বন্ধ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কেএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (দৌলতপুর জোন ) মোঃ জাফর আহম্মেদ বলেছেন, যে কোনো ধরনের জুয়ারীদের ধরতে আমাদের অভিযান বারো মাসই অব্যাহত থাকে। তবে আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়া বা বাজির কথা বেশী শোনা যায়, তাই জুয়ারীদের গ্রেফতারের ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসাবে আইপিএল জুয়া বন্ধে ও জুয়ারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
0 মন্তব্যসমূহ