Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

ইঁদুর










লেখা:জেনিকা সুরাইয়া শ্রাবণী
'সাইফ কোথায় গেল জানিস?' ইয়াসমিন বেগম তার একমাত্র মেয়ে আইকার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন।
আইকা মাথা নেড়ে বললো,'তোমার ছেলেরা আমাকে বলে কিছুই করে না।অবশ্য বললেও আমি শুনিনা।'
'যেটুকু জানতে চেয়েছি সেইটুকুই বলবি।নিজের বাবার মতো তিন লাইন বেশি কথা বলবি না।' মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন ইয়াসমিন বেগম।
আইকা হেসে দিলো।বলল,'কি আর করবো বলো।জেনেটিক্যালি পাওয়া জিনিস তো আর আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা।তবে চেষ্টা করবো।কিন্তু সাইফকে কেন দরকার?'
'আসিফ নাকি বিড়াল এনেছে কোথা থেকে অনেকগুলো।কোথায় রেখেছে সেটা জানার দরকার।তোর বাবার কাছ থেকে নাকি আসিফ টাকা নিয়েছে ক্যাটফুড কেনার জন্য।সাইফ আবার বিড়াল দেখলেই ভয় পায়।'
ইয়াসমিন বেগম চিন্তিত কণ্ঠে বললেন।আইকা আবারও মুচকি হাসলো।
'আম্মু,সাইফের বয়স সাড়ে নয় বছর।বিড়াল যে ভয় পাওয়ার মতো প্রাণী না সেটা ও বুঝবে।আমিও যে বিড়াল ভয় পাই তা তুমি জানো না।' বিদ্রুপের সুরে বললো আইকা।
ইয়াসমিন বেগম বলল,'তোর বয়স উনিশ বছর।তুই বিড়াল ভয় পাস, সাইফের কি অবস্থা ভেবে দেখেছিস? আসিফই বা কেন এখন বিড়াল পুষবে?' ইয়াসমিন বেগম আবারও চিন্তিত স্বরে বললেন।
আইকা বললো,'সেটা আসিফের কাছেই শুনতে পারো।আমার থেকে ভালো আর সঠিক উত্তর ও দিতে পারবে।আর হ্যাঁ সাইফ কিংবা আসিফ যার দেখা আগে পাবে আমার ঘরে আসতে বলবে,খুব দরকার। এখন গেলে খুশী হবো।'
ইয়াসমিন বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।এখন তাকে যেতে হবে মেয়ের ঘর থেকে।মেয়ের ব্যবহার এরকমই বরাবর।বাবা মা বেশি আহ্লাদ দিলে এমন তো হবেই।ইয়াসমিন বেগম কিছু না বলে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।আইকা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।সাইফ কোথায় তা আইকা জানে।চলেও এসেছে খুব সম্ভবত। আবার আসিফ বেড়ালগুলো কোথায় রেখেছে আইকা তাও জানে।তার মা যে রাগ করেছে চলে যেতে বলায় আইকা তাও জানে।আইকা মনে মনে বললো, 'সবজান্তা কিন্তু কোনো বিষয়ে পণ্ডিত নয়।'
আইকা এখন কার্ল কোহেন,ইরভিং কপি,কেনিথ ম্যাকমাহন এর 'ইনট্রোডাকশন টু লজিক' বইটা পড়া শুরু করবে। এই বইটি সঠিক যুক্তির মৌলিক পদ্ধতি এবং কৌশলগুলি এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিষয়গুলির প্রাসঙ্গিকতা দেখায়।আইকা পড়া শুরু করলো।
ইয়াসমিন বেগম বসার ঘরে ঢুকেই মাথায় হাঁত দিয়ে বসে পড়লেন।তার সামনে এখন দশ থেকে বারোটা ইঁদুর ধরার কল।ইয়াসমিন বেগমের বাড়ি পাঁচতলা এবং তিনি পরিবারসহ চারতলায় থাকেন।ইঁদুরের উপদ্রব নেই বললেই চলে।ভেতর ঘর থেকে সাইফ হাসি মুখে টাকি মাছের শুঁটকি হাতে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকলো।ইয়াসমিন বেগম নিজেকে সংযত করে বললেন,'এগুলো কিজন্য কিনেছিস? হাতে মাছ কেন? তাও শুঁটকি? ইঁদুর কোথায় যে তুই তা ধরার জন্য এতগুলো কল কিনেছিস?' সাইফ একটা ইঁদুর ধরার কল হাতে তুলে নিয়ে তাতে শুঁটকিমাছ বাঁধাতে বাঁধাতে বলল,'আম্মু,আসিফ ভাইয়া বিড়াল পুষতে পারবে আর আমি ইঁদুরশিকার করতে পারবো না?'
ইয়াসমিন বেগম তাজ্জব বনে গেলেন।বললেন,'বিড়াল পোষার সাথে ইঁদুর ধরার কি সম্পর্ক বল দেখি আগে? ইঁদুর কোথায় যে ধরবি? ইঁদুর ধরে কি করবি? ভেজে খাবি?' সাইফ মায়ের কথায় হাসছে।সাইফ বললো,'ইঁদুর ধরে পুষবো।ইঁদুরকে গৃ্হপালিত প্রাণী বানাবো।ইঁদুর ভেজে যদি খাওয়া গেলে খেতেও পারি আম্মু।তুমি কি জানো কে খেয়েছে ইঁদুর ভেজে?' ইয়াসমিন বেগম হাত কোথায় দিবেন ভাবছেন।একথা শোনার পর তো শুধু নিজের মাথায় হাত দিলে হয় না,পুরো বংশের মাথায় হাত দেওয়ার কথা।কে কোনোদিন শুনেছে ইঁদুর পোষার কথা।ইয়াসমিন বেগমের হার্টের ট্রিটমেন্ট চলছে।যেকোনো পরিস্থিতিতেই তিনি চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারবেন না।তাই নিজেকে সামলে বললেন,'কে ইঁদুর পুষেছে জীবনে? আমার বাড়িতে এখন ইঁদুর পোষা হবে? খালি ইঁদুর কেন? এক ভাই বেড়াল একভাই ইঁদুর পুষবে।তোর বাবা আসার সময় দেখা গেলো গাধা নিয়ে আসলো একটা।আর তোর বোনের তো এসবে হবে না। সে হয়তো হাতি পালবে বলে ঠিক করে রেখেছে।ছোটখাটো চিড়িয়াখানা বানা বাড়িটাকে।' সাইফকে চিন্তিত লাগছে বেশ।সাইফ মনে হয় ভাবছে হাতি আর গাধা কোথায় রাখবে সে কথা।সাইফ সোফার কোণায় বসলো,ইঁদুর ধরার খাচায় সাইফ শুঁটকিমাছ লাগাচ্ছে।দোকানদার বলেছে শুঁটকিমাছ দিলে ইঁদুর ধরা পড়বেই।ইঁদুরের গন্ধশক্তি প্রবল।সাইফ বললো,'আম্মু তুমি আমাকে টেনশনে ফেলে দিলে।আমি ইঁদুর পুষতে চেয়েছিলাম আসিফ ভাইয়ার বিড়ালের সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্য।টম এন্ড জেরী যেমন করে তেমন।কিন্তু গাধা আর হাতি রাখলে আমার ইঁদুর গুলো তো ওদের পায়ের নিচে চাপা পড়ে মরে যাবে।' ইয়াসমিন বেগম নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।ছেলে তার কি সব বলে চলেছে।বাংলা সিনেমার নায়ক বাপ্পা রাজের মত গলা ফাটিয়ে ইয়াসমিন বেগমের বলতে ইচ্ছে করছে,'না! না!না!এ হতে পারে না।না! আমি বিশ্বাস করিনা।' সাইফের মাথায় এরকম বুদ্ধি আসলো কিভাবে তা জানার দরকার,ভাবলেন ইয়াসমিন বেগম।বললেন,'ইঁদুর যখন পায়ে চাপা পড়ে মরেই যাবে পোষার দরকার কি তাহলে? পুষতে যখন পারবি না তাহলে ধরবি কেন ইঁদুর? ' সাইফ ইঁদুর ধরার খাঁচা নিচে রাখলো।সাইফ বলতে শুরু করলো,'আম্মু জানো, উত্তর-পশ্চিম ভারতে হিন্দু দেবী করিনী মাতাকে উৎসর্গীকৃত একটি মন্দিরে যেখানে ১৫,০০০ এরও বেশি ইঁদুর আছে।এই ইঁদুরগুলোর উপাসনা করা হয় এবং সুরক্ষা দেওয়া হয় এবং মন্দিরের ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তারা মারা গেলে তাদের ইঁদুর হিসাবে পুনর্জন্ম হবে।' ইয়াসমিন বেগম চোখ মোটা মোটা করে ছেলের দিকে তাকালেন।কোনো কাজ হলো না। সাইফ বলে চলল,'জানো লেজের মাধ্যমে ইঁদুর নিজের দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখে? আমাদের মতো ঘামে না ইঁদুর। ইঁদুরের দাঁত আজীবন বড় হতে থাকে।কখনো থামে না।ইঁদুররাও আমাদের মতো সামাজিক। ওরা একসাথে থাকে।কোনো ইঁদুর অসুস্থ হলে অন্য ইঁদুর তাদের যত্ন নেয়।ইঁদুরদের স্মৃতিশক্তি ভালো,খাবারের রাস্তা একবার দেখেই মনে রাখতে পারে।ইঁদুরও হাসে কিন্তু আমাদের মতো না।একটু আলাদা, উচ্চস্বরে।আরো আশ্চর্য কি জানো ইঁদুর উটের চেয়েও বেশি দূরে যেতে পারে কোনো পানি না খেয়ে।' ইয়াসমিন বেগম অবস্থা বেগতিক তা টের পাচ্ছেন।তার বড়ছেলে আসিফের বয়স চৌদ্দ বছর।গত কয়েক সপ্তাহব্যাপী আসিফ বিড়ালের উপকারিকা, গুণাবলি বলেছে বিড়াল পুষবে বলে।মহানবী (স:) বিড়াল পালতেন,এজন্য আসিফও পালবে বিড়াল।ধর্মের জিনিষ নিয়ে তর্ক করা তো যায়না।এখন সাইফও ইঁদুর পুষবে।কারণ ইঁদুরের দাঁত আজীবন বড় হয়।হবে না কেন? দুনিয়ার কাগজ,বই,খাতা,বালিশ,কাথাঁ,কম্বল,জামা-কাপড় দাঁত দিয়ে কাটার মতো মহৎ দায়িত্ব যার ঘাড়ে তার দাঁত ছোট হলে কি হয়।এসব কথা সাইফের জানার কথা নয়।যে ছেলে পাঁচের ঘরের নামতা শিখেছে কিছুদিন আগে সে কিভাবে জানে ইঁদুরের লেজের কাজ।নিঃসন্দেহে এর পিছনে আইকার হাত আছে।এসব জ্ঞানের কথা সাইফের কানে আইকাই ঢেলেছে।ইয়াসমিন বেগম নিজের অবস্থা বুঝতে পারছেন।শরীর দ্রুত খারাপ হচ্ছে।তার উপর বাড়ির কাজের মেয়েটা ছুটি নিয়েছে তিনদিন হলো।কালকে আসবে।ইয়াসমিন বেগমের নিশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে।তিনি ছেলেকে বললেন,'তোর বাবাকে কল দে।দ্রুত বাড়িতে আসতে বল।এভাবে চললে হয় আমি পাগল হয়ে যাবো না হয় হার্ট এট্যাকে মরে যাবো।' সাইফ মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো।মায়ের একাধারে হাই প্রেসার,ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা আবার শ্বাসকষ্টও আছে।সাইফ উঠে পাশের রুমে যেয়ে তার বাবা জনাব কবির হোসেনকে কল দিলো।আইকা সাইফের গলার স্বর শুনতে পাচ্ছে।সাইফ বলছে,'বাবা,আম্মুর শরীর খারাপ লাগছে তাই তোমাকে আসতে বলছে।(৫সেকেন্ড বিরতি)আর হ্যাঁ আসার সময় ভুলেও গাধা নিয়ে আসবে না।রেখে দিলাম।' আইকা বই রেখে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে গেলো।ইয়াসমিন বেগমকে সোফায় বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে দেখলো আইকা।ইনহেলার নিয়ে দিলো মায়ের হাতে আইকা।ইয়াসমিন বেগম ইনহেলার নিয়ে বললেন,'সাইফকে ইঁদুর পালার কথা তুই বলেছিস?' আইকা মাথা নেড়ে না বোঝালো।আইকা বলল,'আগেই বলেছি তোমার ছেলেরা আমার কাছে শুনে কিছুই করেনা।আমার কাছে শুনলে আবশ্য আমি ছুঁচো পোষার কথা বলতাম।ইঁদুর সাইজে একটু ছোটো হয়ে যায় বিড়ালের তুলনায়।'
ইয়াসমিন বেগম অগ্নিদৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকালেন।বললেন,'তুই বলিসনি? সাইফ কিভাবে জানবে ইঁদুর সামাজিক নাকি অসামাজিক প্রাণী,ইঁদুর ঘামে না।সত্যি কথা বল।ছুঁচো? আল্লাহ এইদিন দেখার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছো?'
আইকা মায়ের পাশে বসে বললো,'আম্মু একটুতেই ভেঙে পড়লে কিভাবে হবে?  সাইফ বলেছে ইঁদুর পুষবে।এখনও তো ইঁদুর ধরতেও পারিনি।যদি ধরার ঠিক কৌশলই বেছে নিয়েছে।ধরা পড়বে,চান্স আছে ৯০ শতাংশ। তুমি হতাশা বেগমের মতো আচরণ করছো।'
 ইয়াসমিন বেগম বললেন,'বাহ,নিজের মা কে বলছিস হতাশা বেগম।ইঁদুর ধরা পড়লে বাড়িতে যখন রাখবে তখন বুঝবি কত ইঁদুরে কত জ্বালা।' আইকা হেসে বলল,'আম্মু,শুধু শুধু চিন্তা করছো।ইঁদুর ধরা পড়লে যদি সাইফ বাসায় নিয়ে আসে, তুমি আরো সহজে তাড়াতে পারবে।হ্যামিলনের বাঁশিয়ালার মত বাঁশি বাজিয়ে পাশের জেলায় নিয়ে যাবে ইঁদুরগুলোকে।ব্যস,এবার চিন্তা ছাড়ো।' ইয়াসমিন বেগমের আশ্চর্যের সীমা ছড়িয়ে যাচ্ছে।তিনি বললেন,'বাঁশি বাজিয়ে যদি ইঁদুর তাড়ানো যেত তাহলে আর ইঁদুর মারা বিষ এত বিক্রি হতো না।তোর মতো চিন্তা করলে জীবন গল্পের মতো হতো।কিন্তু জীবন জীবনই,কোনো গল্প উপন্যাসের প্লট না।'আইকা তার মায়ের মুখের দিকে তাকালো,বলল,' আম্মু তুমি মাঝে মাঝে চমৎকার কথা বলো জানো।কিন্তু গল্পের মতো জীবন কি খারাপ?' ইয়াসমিন বেগম কিছু বলার আগেই তার বড়পুত্র আসিফ বড় একটা কাগজের বাক্স নিয়ে ঘরে ঢুকলো।আইকার দিকে তাকিয়ে সাইফ বলল,' আইকা আপু,বলতো এক স্ত্রী তার স্বামীকে চেয়ার দিকে কেন মেরেছে?'
 আইকা বলল,'আগে বল বাক্সে কি? যদি বিড়ালের বাচ্চা হয় তবে বাচ্চাগুলোকে তাদের মায়ের থেকে আলাদা করা উচিৎ হয়নি।আর যদি মাসহ বাচ্চাদের নিয়ে আসিস তাহলে সাবধান।মুরগী,বিড়াল,কুকুর নিজেদের ছোট বাচ্চাদের প্রতি বেশ সংবেদনশীল।'
আসিফ বেড়ালের বাক্স নিচু করে আইকাকে দেখালো।ইয়াসমিন বেগমও একনজর দেখলেন।ইয়াসমিন বেগমের হার্টবিট আগের থেকে একটু বেড়ে গেলো।সবগুলো বিড়ালই কুচকুচে কালো। এই বিড়ালে পথ কাটলে কোথাও যেতে হয়না।
আসিফ বলল,'অনেক কষ্ট করে বিড়ালগুলো সিঁড়িঘরে থেকেছে এতদিন।আম্মু পারমিশন দিয়েছে তাই নিয়ে আসলাম।বাচ্চা বিড়াল,মা বিড়াল সবই আছে।খুব সম্ভবত বাবা বিড়ালও আছে।'
ইয়াসমিন বেগম বললেন,'বাবা আসিফ,তুমি কিভাবে এই বিড়ালগুলো ধরেছো বাবা?'আইকা একবার মায়ের একবার ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।এমন মুহূর্ত কথা বলে নষ্ট করা যাবে না।
আসিফ বলল,'আম্মু বিশ্বাস করবে না এত কষ্ট করে খুঁজে খুঁজে পেয়েছি।ইমন আর আমি মিলে খুঁজেছি।জেএসসি পরীক্ষায় এত পরিশ্রম করলে নিশ্চিত সেন্টারে ফার্স্ট হতাম।নয়টা বিড়ালের সবগুলো পুরো কালো।একটুও সাদা,বাদামী,কমলা,ধূসর বর্ণ নেয় ওদের গায়ে।'
ইয়াসমিন বেগম নিজেকে রাগ থেকে সামলে বললেন,'আচ্ছা বাবা,কিন্তু এই কালো বিড়াল পুষে তুমি কি বোঝাচ্ছো?'
আসিফ বাক্স নিচে রেখে বসলো,বলল,'আম্মু তুমি বর্ণবৈষম্য করছো।কালো বলে কি ওরা বিড়াল না? কালো বলে কি ওদের পোষা যাবেনা? ওরা কি ইচ্ছে করে কালো হয়েছে।তুমিই তো বলো আল্লাহতায়ালার সব সৃষ্টিই সুন্দর।কালো বিড়ালও তো সুন্দর!' 
আইকা আসিফের সাথে সুর মিলিয়ে বলল,'Yes Mother. You are being racist.কবি বলে গেছেন-কালো জগতের আলো।'
ইয়াসমিন বেগম বললেন,'কি উঁচুলেভেলের চিন্তাভাবনাকারী সন্তান জন্ম দিয়েছি আমি।একজন বলে কালো বলে কি কালো বিড়াল পোষা যাবেনা আর আরেকজন বলে ইঁদুর সামাজিক জন্তু তাই পুষতে হবে।সবচেয়ে গুণবতীর তো আবার ছুঁচো প্রথম পছন্দ।তোরা এক কাজ কর।আমি আমার ভাইয়ের বাসায় চলে যাচ্ছি।তোদের যা যা পুষতে ইচ্ছে হয় নিয়ে আয়।শুনেছি আমেরিকা ইউরোপে মানুষ আজগরও পোষে।তাও আনতে পারিস।নিজেদের ছোটখাটো চিড়িয়াখানা হয়ে যাবে।'
আসিফের মুখ দেখে মনে হচ্ছে বুদ্ধিটা ওর বেশ পছন্দ হয়েছে।আইকা আসিফের থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,'আম্মু,এসব কি বলছো? তুমি মামার বাসায় কেন যাবে।এতই যখন আমাদের ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয় তুমি আলাদা বাসা নিতে পারো।নিচ তলার ভাড়াটিয়ারা নাকি সামনের মাসে চলে যাবে,ওখানেও যেতে পারো।হ্যাঁ,নিচে যাওয়ায় ভালো হবে আম্মু।মামার বাসার কথা বাবাকে বলো না,রাগ করবে।'
আসিফ আইকার সাথে একমত হলো,বলল,'আম্মু তুমি একা যাবে? সামান্য ইঁদুর,বিড়ালের জন্য চলে যাবে?' ইয়াসমিন বেগম উঠে দাড়ালেন,বললেন,'আমার পাগল হতে আর বেশি দেরি নেই।পাবনার হেমায়েতপুরে পাঠাবি আমাকে, আর কোনো পাগলাগারদ আমার পছন্দ না।আমি শুয়ে থাকবো এখন।তোর বাবা আসলে ডেকে দিস আমাকে।'ইয়াসমিন বেগম তার শোবার ঘরে ঢুকলেন।সাইফ তার ভাই বোনের কাছে এসে দাড়ালো,বলল,'আইকা আপু,ইঁদুর ধরার এ কলগুলো কোথায় লাগানো যায় বলোতো।' বলেই সাইফ বিড়ালের বাচ্চা রাখা বক্সের দিকে এগিয়ে গেলো। 
একটু দূরে দাঁড়িয়ে বাচ্চাগুলোকে দেখতে লাগলো সাইফ।বিড়াল পছন্দ না সাইফের,কি চিকন চিকন নখ,গায়ে কত লোম।সাইফের ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে দেখতে কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না।যদি আঁচড় দেয় নখ দিয়ে।আসিফ বলল,'আমাদের বাড়ির আশপাশ দিয়ে লাগাতে পারিস।নিচতলার শামীম একবার বলেছিলো ওদেরকে ইঁদুর জ্বালাতন করছে।'
আইকা বলল,'ঝোপঝাড় আছে এমন যায়গায় লাগাবি কলগুলো।সাপও ধরা পড়তে পারে।'
সাইফ বিড়াল রেখে ইঁদুর ধরার কলগুলো গোছাতে লাগল,বলল,'সন্ধ্যা হলেই রেখে আসবো।বারোটা ইঁদুর ধরার কল,পাঁচ ছয়টা ইঁদুর তো ধরা পড়বেই।'
আইকা বলল,'ধরা পড়লে রাখবি কোথায়?ইঁদুর পোষা কিন্তু যেনতেন কাজ না।কি খাবার দিবি,কোথায় ঘুম পাড়াবি ভেবেছিস?' আসিফ তার বেড়ালের বাক্স নিয়ে নিজের ঘরে চলে যাবে।যাওয়ার আগে আসিফ বলল,'আঠা আপু,স্ত্রী তার স্বামীকে চেয়ার দিয়ে মেরেছিলো কারণ টেবিলটা ভারী ছিলো তুলতে পারিনি বেচারি। ' সাইফ আসিফের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,'মানে? মারবে কেন?' আসিফ চলে গেল উত্তর না দিয়ে।আইকা শুনে বলল,'তুই ওসব বুঝবিনা।তোর পোষা ইঁদুর যদি মেয়ে হয় তবে তিন সপ্তাহ পর পর কিন্তু ইঁদুরছানা দিবে।আর তোর ইঁদুরছানা মেয়ে হলে তিন চার মাস পর পর ইঁদুর পোনা দিবে।ভেবেছিস? ' সাইফকে এ নিয়ে বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে না।
সাইফ বললো,'সবই বুঝলাম।কিন্তু আমার ইঁদুর কি আমি আসিফ ভাইয়ার মতো নিজের ঘরে রাখতে পারবো?'
আইকা বলল,'রাখতে পারবি।কিন্তু রাখা কি ঠিক হবে?প্রায় ছাপান্ন প্রজাতির ইঁদুর চিহ্নিত করা হয়েছে আর ঐসব ইঁদুর থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ রকমের বেশি রোগ হতে পারে।'
সাইফ ইঁদুর ধরার কল রেখে আইকার মুখের দিকে তাকালো।সাইফ করুণ বললো,'তাহলে,ঐ বাচ্ছা ছানাপোনা গুলো আমি নিজের কাছে রাখতে পারবো না?' 
আইকা আশ্বস্ত করে বলল,'আগেই বলেছি,রাখতে পারবি কিন্তু রাখা ঠিক হবেনা।তুই বরং ছাদে ইঁদুরঘর বানাতে পারিস ছোটকরে......।' আইকার কথা শেষ না হতেই কলিংবেল বাজলো।সাইফ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,'বাবা এসেছে।' সাইফ দরজা খুলল।তার বাবা কবির হোসেন হাতে কাঁচাপাকা তেতুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেকে দেখে কবির হোসেন বললেন,'তুই আর তোর ভাই কি তোদের মা কে একটু সুস্থ হতে দিবি না?'সাইফ কোনো উত্তর দিলোনা।দিবে কিভাবে,সাইফ তো প্রশ্নের মানেই বুঝতে পারিনি।মায়ের অসুস্থতার সাথে তার কি সম্পর্ক?  বুঝতে পারছেনা সাইফ।কবির হোসেন ভেতরে ঢুকলেন,আইকাকে বসা দেখে জিজ্ঞাস করলেন,'সাইফ আর আসিফ কি করেছে জানিস?বদের বদ হচ্ছে ছেলেদুটো।কিছু ব্যবস্থা নিতেই হবে।'
আইকা উঠে দাঁড়াল। নিজের ঘরে যাবে এখন আইকা।যেতে যেতে বলল,'তুমি কিছু জানোই না। আগে শোনো সব।তারপর সিদ্ধান্ত নাও।সাইফ,বাবাকে পানি দে আর আম্মুকে ডেকে নিয়ে আয়।বাবা,তুমি কি চা খাবে?'
সাইফ পানি আনতে চলে গেলো।
কবির হোসেন বললেন,'চা বানালে খাবো।না বানালে কিভাবে খাবো।আবার চা বানিয়ে আমাকে না দিলে খেতে পারবো না।বড় বদটা কোথায়?'
আইকা বলল,'আমার ছোট ভাইগুলোকে তুমি বদ বলছো কেন? বুদ্ধিকম হলে কি বদ বলতে হবে? আমি চা বানাতে যাচ্ছি।এখানে বসো।ফ্যান তো চলছেই,তাও যদি গরম লাগে তাহলে নিজের ঘরে যেয়ে এসি ছেড়ে দিও।'
আইকা চা বানাতে রান্নাঘরে গেল।কবির হোসেন তেতুলগুলো টেবিলে রেখে সোফায় নিজেকে এলিয়ে দিলেন।সাইফ পানি এনে বাবার হাতে দিলো।
সাইফ বলল,'বাবা,কিছু হলেই তুমি আমার আর ভাইয়ার দোষ দাও।আপুকে কেন কিছু বলো না?মেয়ে বলে কি সাত খুন মাফ?' কবির হোসেন পানিতে চুমুক দিলেন।ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি।ছেলের কথা শুনলেন।আসলেই তার কখনো মনে হয়না তার মেয়ে কোনো অন্যায় কাজ করতে পারে।এমনকি সব মেয়ের বাবার হয়?কবির হোসেন গ্লাস রাখলেন।ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,'আইকা কখনো তোদের মত করেছে কি?না আসিফের মতো গাছ থেকে পড়ে হাত পা ভেঙেছে না তোর মতো এক ক্লাসে তিনবার ফেল করেছে।'
সাইফ কিঞ্চিৎ বিব্রতবোধ করলো।এগুলোর সাথে মায়ের অসুস্থতার সংযোগ কি? 
সাইফ বলল,'আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি বাবা শোনো।যে জায়গায় গোবর থাকে সেখানের ঘাস বড় হয় বেশি।এখন দেখো আপুর চুল কতো বড় আর আমার চুল কতটুকু।বুঝেছো?'
কবির হোসেন অবাক হলেন।বললেন,'বেশি গোবর দিলে আবার ঘাস বড় হয়না ছোট থাকে।তোর মাথায় বেশি গোবর। এজন্য চুল ছোটো।' সাইফ কষ্ট পেল মনে।অনেক ভেবে চিন্তে এইকথা আবিষ্কার করেছে সে।সাইফ কিছু না বলেই উঠে চলে গেল তার মা কে ডাকতে।আইকা চা এনে রাখলো কবির হোসেনের সামনে।
কবির হোসেন বললেন,'তুই যে বললি সাইফ আসিফকে কেন আমি বদ বলি।কেবল আমাকে কি বলেছে শুনেছিস?'
আইকা হেসে দিলো।বলল,'শুনেছি।ও গতপরশু আমার কাছে শুনেছে বাগানের একপাশের ঘাস বড় আর অন্যপাশেরটা ছোট কেন।আমি বলেছি বড় ঘাস গুলোয় গোবর দেওয়া হয়।কি দারুণ জিনিস বের করেছে দেখেছো?' 
কবির হোসেন মেয়ের দিকে তাকালেন।তার মেয়ে হাসছে।কি সুন্দর।যাকে তার ছোটভাই কেবল বললো যে তার মাথায় গোবর বেশি, শুনেও হাসছে। কবির হোসেন মেয়ের হাসি বাড়ানোর জন্য  বললেন,'একটা ঘটনা মনে পড়লো।বলছি শোন,বিখ্যাত লেখক জর্জ বার্নার্ড শ-র বাড়িতে বেড়াতে এসে এক মহিলা অবাক হয়ে  বললেন, – মিস্টার শ, আপনার ঘরে দেখছি একটাও ফুলদানি নেই। আমি ভেবেছিলাম, আপনি এত বড় একজন লেখক; আপনি নিশ্চয়ই ফুল ভালবাসেন। তাই আপনার বাসার ফুলদানিতে বাগানের তাজা ও সুন্দর ফুল শোভা পাবে।
প্রত্যুত্তরে শ সঙ্গে  সঙ্গেই বললেন, – ম্যাডাম, আমি বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকেও ভালবাসি। তার অর্থ এই  নয় যে, আমি তাদের মাথা কেটে নিয়ে এসে ঘরে সাজিয়ে রাখব।'
আইকা হাসলো।কবির হোসেনও হাসিতে যোগ দিলেন।আইকা বলল,' জর্জ স্যারের জীবনে এমন অনেক ঘটনা আছে।বিখ্যাত নর্তকী ইসাডোনা ডানকান একবার জর্জ বার্নার্ড শ কে লিখলেন,) "ভাবুন তো, আপনি আর আমি যদি একটা শিশুর জন্ম দিই, ব্যাপারটা কী চমৎকারই না হবে! সে পাবে আমার রূপ, আর আপনার মতো মেধা।"
বার্নাড শ’ জবাবে লিখলেন, "যদি আমার রূপ আর আপনার মতো মেধা পায়, তবে...?"...'
কবির হোসেন শব্দ করে হাসলেন।এর মধ্যেই ইয়াসমিন বেগম বসার ঘরে আসলেন।
ইয়াসমিন বেগম বললেন,'এত হাসাহাসি হচ্ছে কি নিয়ে শুনি? বাবা মেয়ের তো দুনিয়ার কিছু নিয়েই কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।' 
কবির হোসেন হাসি থামিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,'তেমন কিছু না।চিন্তা করার জন্য তুমি আছো তো।আমাদের চিন্তা না করলেও চলবে।তাই না মা?'
আইকা মাথা নেড়ে না বলল।আইকা মায়ের পাশে বসে বলল,'আম্মু জীবনে অনেক চিন্তা করেছো।চিন্তা করে করে রোগ বাধিয়েছো।তোমাকে দেখে শিখেছি চিন্তা করা যাবেনা একদমই।'
ইয়াসমিন বেগম বললেন,'তিনদিন সাথী কাজে আসেনা।আমাকে তো একবেলা চা বানিয়ে খাওয়াস নি।' 
আইকা বলল,'তুমিও তো কখনো বলোনি চা খাবে।আচ্ছা, এনে দিচ্ছি।তোমরা ইঁদুর বিড়ালের আলোচনা করো আর সিদ্ধান্ত নাও।' বলে আইকা উঠে রান্নাঘরে গেল চা আনতে। ইয়াসমিন বেগম তার স্বামীকে চলমান ঘটনাবলী জানালো।তার পুত্রদ্বয়ের সুপরিকল্পিত বিড়াল-ইঁদুর পালনের কথা জানালেন।ইয়াসমিন বেগম বললেন,'আমার মনে হয় আইকার হাত আছে এই ইঁদুর পালার বিষয়ে,বিড়ালের ক্ষেত্রেও হতে পারে আইকা সবকিছু জানে।তোমার তো আবার মেয়ের কোনো দোষ চোখে পড়েনা।' 
কবির হোসেন কিছু বললেন না শুনে চলছেন।মাঝে মাঝে হু হু করছেন।ইয়াসমিন বেগম বলতে চললেন, 'আমি আইকার কাছে শুনেছি যে ও সাইফকে বুদ্ধি দিয়েছে কি না।আমাকে না বলেছে।তোমাকে কি বলে দেখার বিষয়।শুনছো আমার কথা? আমার বাড়িতে আমি ইঁদুর পুষতে দেবো না।আর ঐ কুচকুচে কালো বিড়াল চোখের সামনে দিয়ে ঘুরবে।বাথরুমে যাওয়ার আগে যদি বিড়াল সামনে আসে বাথরুমে যাওয়া যাবে না।কি রকম পরিস্থিতিতে পড়তে পারি আমরা ভাবতে পারছো?' 
কবির হোসেন বুঝলেন এবার কিছু বলার দরকার।তিনি বললেন,'আইকা এসব করার উস্কানি দিয়েছে? না, এমন মেয়ে সে নয়।বিড়াল তো আসিফের ঘরে থাকবে,তোমার ঘরে থাকবে না।' 
ইয়াসমিন বেগম বললেন,' তারমানে তোমার এসবে কোনো অবজেকশন নেই? ইঁদুর বিড়াল বাড়িতে থাকবে তার মাঝে তুমিও থাকবে,তোমার তাতে কোনো সমস্যা নেই।ভালো,খুব ভালো।' 
কবির হোসেন কি  বলবেন বুঝতে পারছেন না।আইকা এসে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো ইয়াসমিন বেগমের দিকে।ইয়াসমিন বেগম চায়ের কাপ নিলেন।আইকা মায়ের পাশে বসলো।আইকা অবস্থা বুঝতে পারছে।এখন ইঁদুর বিড়াল থেকে বাবা মা কে সরিয়ে আনতে হবে।যারা প্রথাসিদ্ধ না মেনে ভিন্ন কিছু করে তারাই জীবনে নতুনত্ব  অর্জন করতে পারে।জীবন একটাই, নিজের মতো নতুন করে যাপন করতে ক্ষতি কি? সাইফ না হয় ইঁদুরই পুষলো।
আইকা বলল,'ধনাণি জীবিতঞ্চৈব পরার্থে প্রাজ্ঞ উৎসৃজেৎ।
সন্নিমিত্তে বরং ত্যাগ বিনাশে নিয়তে সতি।' 
কবির হোসেন আর ইয়াসমিন বেগম দুইজনই আইকার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।যেন বিয়ের পিড়িতে কন্যা বলেছে বাথরুমে যাবো।
আইকা পরিস্থিতি সহজ করার জন্য বললো,' এটা সংষ্কৃত শ্লোক।অর্থ হলো, জ্ঞানী ব্যক্তি পরের হিতের জন্য নিজের ধন ও প্রাণ বিসর্জন করবে। ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী, সৎকার্যে ত্যাগই ভাল।'
শুনে কবির হোসেন মাথা নাড়লেন।
ইয়াসমিন বেগম বললেন,' তোকে শ্লোক বলতে কে ডেকেছে? মানে কি? তুমি কিছু বলছো না কেন?কবির হোসেন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,'আমি কি বলবো? আমি সংষ্কৃত জানিনা।' ইয়াসমিন বেগম বললেন, 'এ বাড়িতে আমার আর থাকা চলে না। বুঝে গেছি তা আমি।' আইকা বলল,' কি বলছো এসব আম্মু।তুমি তোমার ঘরে যেয়ে রেস্ট নাও।কালকে সব ঠিক হয়ে যাবে।' কবির হোসেন মেয়ের কথায় সায় নিয়ে বললেন,' হ্যাঁ, রেস্ট নাও।তোমার জন্য তেতুল এনেছি।কাঁচা খাও।প্রেসার কমে যাবে।' 
ইয়াসমিন বেগম বললেন,' হ্যাঁ। আমি রেস্ট নিচ্ছি আর তোমরা আমার চোখের সামনে বাড়িটাকে চিড়িয়াখানা বানাও।যা খুশী করো।আমি কালকে চলেই যাবো।' বলেই ইয়াসমিন বেগম উঠে নিজের ঘরের দিকে চললেন।
কবির হোসেন হেসে মেয়ের দিকে তাকালেন। কিছুক্ষণ বাবা-মেয়েও মনমতো কথা বললো।দিনশেষে আসিফের ঘরে বিড়াল আর সাইফ ইঁদুর ধরার কল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।


আইকা ঘুম থেকে উঠেছে চেঁচামেচির শব্দে।সাইফ আর আসিফ দুইজনেই চিল্লাচিল্লি করছে।আইকা নিজের ঘরে একটা বিড়াল পেয়েছে।আইকা নিজের ঘর থেকে বসার ঘরে গেল।আইকা যা দেখলো তা দেখার জন্য সে একদমই তৈরি ছিলো না।সাইফের ইঁদুর ধরার কল একটা মাত্র দেখা যাচ্ছে আর তাতে আইকার প্রিয় একটা ছুঁচো। ছুঁচো দেখলেই গন্ধের কথা মনে পড়লো আইকার।এদিকে আসিফের চোখে,ঠোটে,গালে ছাড়াও হাত পা গলায় বিড়ালের আচড়।
আইকা সাইফকে জিজ্ঞেস করলো,'কিরে,তোর ইঁদুর কই? ছুঁচো পালবি নাকি?' 
সাইফ বেশ ক্রুব্ধ স্বরে বললো,' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিকই বলেছেন,ষোল কোটি মানুষ কে বাঙালী করে রাখা হয়েছে মানুষ করা হয়নি।' 
আইকা সাইফের পাশে যেয়ে বসলো,বলল,'পুরো কবিতা যে তুই পড়িসনি বোঝা যাচ্ছে।কি হয়েছে তাই বল।' 
আসিফ হেসে বলল,'আইকা আপু,শুনিস না আর।ওর ইঁদুর ধরার কল চুরি হয়ে গেছে।এই একটা পাওয়া গেছে বাকি গুলো হাওয়া।' 
আইকা আসিফের দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের স্বরে বললো,   'তুই যে এত হাসছিস,তোর গায়ে তো বিড়ালরাজ্যের মানচিত্র আঁকা হয়েছে।কেমন লাগছে এখন?' 
আসিফ হাসি থামাল,বললো,'আর বলিস না।বিড়ালগুলো খুবই যন্ত্রণা দিয়েছে।কিন্তু বিড়ালের হাগু যে এত গন্ধযুক্ত তা জানা ছিলোনা।পুরো ঘর ভর্তি হয়ে গেছে আমার,বিছানা,বালিশ কিছুই বাকি নেই।কেমিস্ট্রি বইয়ের উপরও একটু হেগেছে।আটখানা বিড়ালকে বিতাড়িত করেছি স্বসম্মানে।কিন্তু আর একটাকে খুঁজে পেলাম না।' এবার আইকা জোরে শব্দ করে হাসলো।বলল,'তোদের আর কিছু পালার বুদ্ধি দিবো না আমি।আর একটা বিড়াল সুযোগ বুঝে আমার ঘরে পালিয়েছে।তুই ওটাই পোষ।' সাইফকে মুখ ভারী করে বসে থাকতে দেখে আইকা বললো,'তোর আর ইঁদুর পালতে হবেনা।এই ছূঁচোর ব্যবস্থা কর কোনো।কিংবা একেও পালতে পারিস।' 
আইকা আসিফের দিকে তাকিয়ে বললো,'আম্মু কি ঘুম থেকে উঠেছে? না উঠলে চল,ঘুম ভাঙিয়ে সুখবরগুলো দিয়ে আসি।'



দ্বাদশ শ্রেণি,সরকারি এমএম কলেজ,যশোর।
ঠিকানা:কুড়িগ্রাম, আশ্রম রোড,নড়াইল সদর,নড়াইল।
মোবা:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

রামপাল

5/রামপাল/feat-tab

সাম্প্রতিক

5/সাম্প্রতিক/feat-tab

বাগেরহাট

5/বাগেরহাট/feat-tab

Facebook

Search This Blog

এখানে সার্চ করুন

জাতীয়

4/জাতীয়/grid-big

রাজনীতি

6/রাজনীতি/grid-small

সংবাদ শিরোনাম


Ads

Ads

Ads

Ads

Ads

Ads

সর্বশেষ

3/recent/post-list

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক/feat-big