নাহিদ জামানঃ
আমাদের সমাজ টা পুরুষ শাসিত। এই সমাজে নারী জন্ম থেকেই অবহেলিত। একটি ছেলের যখন বিয়ের বয়স হয় তখন প্রাথা অনুযায়ী মেয়ে দেখতে যায়, মেয়েটি কে এমন ভাবে দেখে, মেয়ে দেখা, দেখে মনে হয় বাজারে গরু কিনতে এসেছে। মেয়ে দেখা পর্ব শেষ করে, যখন মেয়েটিকে পছন্দ হয়, এর পরে আসে আরেক পর্ব, মেয়েটি যতই সুন্দরি নিক্ষুত হোক না কেন, যৌতুক দিতে হবে তা না হলে বিয়ে হবে না। একটি মেয়ে জন্মের পর হতে তার পিতা মাতা ১৮/২০ বছর লালন পালন করে তাদের আদরের দুলালি কলিজার টুকরা কে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছে এটাই তার পিতা মাতার জন্য অনেক, অনেক কষ্টের, তার পরে আবার যৌতুক দিতে হবে, অনেকে যৌতুক না, বলে আপনাদের জামাই হবে তাকে গাড়ি দিবেন আপনাদের মেয়ে জামাই তো গাড়িতে চড়বে। হয়ে গেল বিয়ে এর পর মেয়েটি যখন মা হতে যাবে, তখন ছেলেটি বলবে, আমার কিন্তু ছেলে চাই, মেয়ে হলে চলবে না। দশ মাস দশ দিন গর্ভের ভেতর রেখে অনেক কষ্ট সর্য্য করে, মা যখন সন্তান প্রস্রব করে, তখন যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হয় শুরু হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দন্দ, মেয়ে হলো কেন? আমি না বলে ছিলাম ছেলে হওয়া চাই, আমার মেয়ে হলে চলবে না, ছেলেটি এমন ভাবে মেয়েটির উপর দোষ চাপিয়ে দেয়, ভাব দেখে মনে হয়, ছেলে মেয়ে হওয়াটা মেয়েটির হাতে। এর পর হয়তো ছেলেটির আশা পুরন হলো, তাদের ঘরে একটি ছেলে হলো, তার পিতা সেই ছেলেটি কে এমন ভাবে লালন পালন করে, তার যে একটি মেয়ে সন্তান আছে এটি সে ভুলে যায়, যত ভালো ভালো খাবার সব ছেলের জন্য, আর মেয়েটি কোন মতে সাধারন খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। এভাবে ছেলে মেয়ে দুটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, মেয়েটি অসুস্থ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ছেলে মেয়ে দুটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় হলে, মেয়েকে অনেক সময় স্কুলে ভর্তি করতেই চায় না, নানান অজুহাত মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে কোন লাভ নেই, দুদিন পর মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে দেব, তখন তো ভাত রান্না করা ছাড়া কোন কাজ করবে না, এভাবে মেয়ে কে স্কুলে ভর্তি করে না, মেয়েটি পিতা মাতার কাছ থেকে অবহেলা অনাদরে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, মেয়েটি যখন কৈশরে পা দেয়, তখন মেয়েটির প্রতি ধাপে ধাপে বিপদ আসতে থাকে, মেয়টি বাহিরে বের হলে ছেলেরা তাকে টিস করে, নানান আজে বাজে কথা বলে, অনেক বকাটে যুবক কু প্রস্তাব দেয়, আর যদি কু প্রস্তাবে রাজি না হয় , অনেক সময় মেয়েটির মুখে এসিড নিক্ষেপের মত ঘটনা ঘটে, অনেক সময় ধর্ষনের মত ঘটনা ঘটে। আবার অনেক সময় পিতা মাতার ইচ্ছায় মেয়ে কে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ তৈরি করে, কিন্তু লেখা পড়া শিখতে গিয়ে মেয়েটি কে ১৮/২৪ বছর পার করতে হয়,এই ১৮/২৪ বছর পার করার পর মেয়েটি কে আর কোন ছেলে বিয়ে করতে চায় না কারন মেয়েটির বয়স নাকি বেশি হয়ে গেছে, অথবা মেয়েটির কোন না কোন দোষ আছে, এতো বয়স হলো এতোদিন কেন বিয়ে হয়নি? অথচ একটি ছেলে ৩০/৩৫ বছর বয়সে বিয়ে করলে তাতে কোন দোষ হয়না, একটি ছেলে বিয়ে করে যদি অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে অথবা যৌন মিলন ঘটায়, তাতে কোন দোষ নেই, আর একটি মেয়ে বিয়ের পর যদি স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের সাথে কথা বলে, তাহলেই স্বামী মাইন্ড করে বসে, এমন কি কথা বলার কারনে স্বামী স্ত্রীর ছাড়া ছাড়ির ঘটনা পযন্ত ঘটে। স্বামী যদি রাগের বসবত্ত্বি হয়ে মুখ দিয়ে তালাক দেওয়ার কথা উচ্চারন করে, আর পরে যদি স্বামী তার ভুল বুঝতে পারে, তখন কিন্তু স্বামী তার স্ত্রী কে স্ত্রী বলতে পারে না এই সমাজের আলেম সম্প্রদায়ের কিছু লোকের কারনে, সমাজে তারা নানান রকম ফতুয়া দেওয়া শুরু করে, ঐ স্ত্রী কে যদি তোমায় ফিরে পেতে হয়, তাহলে তোমার সাবেক স্ত্রী কে অন্য আর একজায়গায় হিল্লা বিবাহ দিতে হবে, যার কাছে হিল্লা বিবাহ দিবে সে যদি না ছাড়ে তাহলে তুমি তাকে পাবে না, আর যদি ছেড়ে দেয় তাহলে আবার নতুন করে বিবাহ করতে হবে। তালাক বললো স্বামী আর স্ত্রী কে হিল্লা বিবাহ করতে হবে, দোষ যদি করে থাকে স্বামী করেছে, এর জন্য স্ত্রী কেন অন্য জায়গায় হিল্লা বিবাহ দিতে হবে? আসলে ব্যাপার হয়েছে এই রকম যত দোষ নন্দ ঘোষ। আমাদের সমাজে মধ্যবিত্ত নারিরা সব সময় পুরুষ শাশিত হয়ে ঘরের মধ্যে বন্ধি হয়ে থাকে, তার উপর আবার ধর্মীয় গোড়ামী, আর এই ধর্মীয় গোড়ামীর কারনে নারিরা অনেক পিছিয়ে থাকে, তাদের কে পর্দার মধ্যে থাকতে হয়, তাদের কে এমন ভাবে পর্দার মধ্যে রাখা হয় তারা এই সমাজের সকল সামাজিক কর্মকান্ড রিতিনিতি থেকে অজ্ঞ থাকে।
ইসলাম ধর্মে নারির পুর্ন্য অধিকার দেওয়া আছে, তারা পর্দার মধ্যে থেকে, সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করতে পারবে, কিন্তু ইসলাম ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, নারীদের কে এই সব কর্মকান্ড থেকে দুরে রাখা হয়। নারি কে বানানো হয় পুরুষের হাতের পুতুল, আর পুরুষ যে ভাবে পুতল নাচাবে, নারি পুতুল হয়ে সে ভাবে নাচবে।
নারি মায়ের জাতি, যে মায়ের জন্ম না হলে আমরা কেহই দুনিয়াতে আসতে পারতাম না, সেই মায়ের স্থান মহান রব্বুল আলামিন সকলের উপরে দিয়েছেন। আমাদের সকলের মনে রাখা উচিৎ, নারি কোন খেলনা করার বস্তু নয়, আমাদের নারি কে পুর্ন মর্যাদা দেওয়া উচিৎ।
নারি জাতি কে কোন লিঙ্গ ভেদে ভাগ না করে, মানুষ হিসাবে স্থান দিয়ে সমান অধিকার দিলে, আমরা সমাজের কুসংস্কার থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।আমরা আমাদের সোনার বংলা কে, সোনার দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে পারবো। এবং ইসলামের পুর্ন্য নির্দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
0 মন্তব্যসমূহ