তন্দ্রা মন্ডল তনু,নির্বাহী সম্পাদকঃ
বিসর্জন অর্থ পরিত্যাগ বা স্বত্বত্যাগ। সাধারণভাবে বিসর্জন বলতে দেবী দূর্গার মর্তলোক থেকে স্বর্গলোকে প্রস্থান করাকেই বুঝি। কথিত আছে দেবী দূর্গা বছরে পাঁচ দিন বাবার বাড়িতে আসেন এ পাঁচ দিন পর আবার শ্বশুর বাড়িতে স্বামী শিবের কাছে ফিরে যান। ফিরে চলে যাওয়ার সময়কে আমরা দেবী দূর্গার বির্সজন বলি। আমরা কি জানি আসলেই বির্সজন শব্দটি কেন মায়ের চলে যাওয়ার সময় ব্যবহার করা হয়? মূলত মায়ের চলে যাওয়ার সময় মর্তলোকের সকল মানুষের সকল ক্রোধ, হিংসা, ঘৃণা, অহংকারসহ সকল খারাপ গুণ বির্সজন দেওয়ার জন্যই বির্সজন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। শাস্ত্রমতে দেবী দূর্গা মর্তলোক ছেড়ে যাওয়ার সময় সকল অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে যায় এবং দেবী দূর্গার চলে যাওয়ার পাঁচ দিন পর দেবী লক্ষ্মী আসে মর্তলোকের মানুষকে ধন-সম্পদে সমৃদ্ধ করতে।
বির্সজন কথাটিকে আমরা একটু অন্যভাবে নিতে পারি। যেমন- যা কিছু খারাপ অর্জন তাকে বিস্মরণ করা। তাই যদি হয় তাহলে আমাদের মধ্যের যত খারাপ গুণ আছে তা আমরা ভূলে যেতে পারি। শুধু তাই নয় যত পুরনো রাগ ও খোপ তাকেও বিস্মরণ ঘটিয়ে নতুনভাবে এগিয়ে যেতে পারি।
খারাপ গুণ না হয় ছেড়ে দিলাম তাতেই কি সমাজের কল্যাণ হবে? কখনোই না! দুই পা যেমন একজন মানুষকে সঠিকভাবে দাঁড়াতে ও চলতে সাহায্য করে তেমনিভাবে সমাজেরও দুই পা আছে যা তাকে একইভাবে চলতে সাহায্য করে।
প্রথম পা খারাপ কাজ না করা আর দ্বিতীয় হলো ভালো কাজ করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মানুষ যেমন এক পা থাকলে চলতে পারে ঠিক তেমনই সমাজও চলতে পারে তবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে।
এগুলো তো নিতান্ত গভীরের কথা যা সাধারণ মানুষ বুঝতেই চায় না। এবার মানুষের ধারণা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। সাধারণত বির্সজন তাদের কাছে শুধুমাত্র দেবী দূর্গার প্রস্থান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। শত চেষ্টা করেও তাদেরকে এ ধারণা থেকে বের করতে পারবেন না। বোঝাতে গিয়ে শেষে আপনি আধুনিকতার ছোঁয়ায় কুলাঙ্গার রূপে অভিহিত হবেন। এটাই সমাজ। যাকে পরিবর্তন করতে গেলে বহুবার কথার জালে অপমানিত হতে হবে।
সমাজের আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করতে যুগে যুগে দেবী দূর্গা এসেছেন বিভিন্ন রূপে যার বির্সজন হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত আসুরিক শক্তির বিনাশ না হয়। তাই সকল মেয়েকে অর্থাৎ দেবীকে শ্রদ্ধা করুন কে বলতে পারে সেই হয়তো দেবী দূর্গার রূপ নিয়ে এসেছেন আপনার আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করার জন্য।
0 মন্তব্যসমূহ