সাইফুল্লাহ তারেক  ঃ  খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রাম বর্তমানে পাপড়ের গ্রাম নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। শতাধিক পরিবার পাপড় তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। গতকাল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহির শ্বশুরালয়ের প্রবেশদ্বারের ডান পাশের মাঠে কাপড় বা চট বিছিয়ে রোদে পাঁপড় শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে নারী পুরুষ ও কিশোররা । রুটির মতো গোলাকৃতির হাজার হাজার পাঁপড়ে মাঠটি ঢাকা পড়েছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে যেন পাঁপড়ের মাঠ! শুধু এ মাঠই নয় এই গ্রামের পথ ধরে চললে চোখে পড়বে কাপড় বা চট বিছিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে হাতে তৈরি পাঁপড়।দক্ষিণডিহি ছাড়াও এ উপজেলার নাওদাড়ি ও তত্তিপুর গ্রামের মানুষ পাঁপড় তৈরির সঙ্গে জড়িত। তিন গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রাত—দিন পাঁপড় তৈরি যজ্ঞ চলে। এর সঙ্গে যুক্ত পরিবারের প্রায় প্রতিটি সদস্য। অনেকে পৈত্রিক পেশা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।ফুলতলার এই পল্লিতে ডালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে কাঁচা পাঁপড় তৈরি করে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়। খুলনা , বরিশাল,  ঢাকা—চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ক্রেতারা এখানকার পাঁপড় কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রি করে থাকেন। খুচরা ক্রেতারা কিনে নিয়ে তা দোকানে, রাস্তার ধারে বা উৎসব উপলক্ষে মেলা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্টলের কাছে বসে তেলে ভেজে তা বিক্রি করেন। আসন্ন দুর্গা পুজাকে সামনে রেখে বর্তমানে এর চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুন। উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত দক্ষিণডিহি গ্রামের পাঁপড় তৈরির কারিগররা জানান, পাঁপড় হচ্ছে পাতলা, কুড়মুড়ে, থালাকৃতির খাবার যা সারাদেশে জনপ্রিয়। এটা সাধারণত মাষকলাই ডাল থেকে তৈরি করা হয়। মসুর, ছোলা, চাল থেকে তৈরি আটা দিয়ে পাপড় তৈরি করা যায়।তারা বলেন, কাঁচা পাঁপড় পাতলা রুটির মতো গোল আকৃতি করে প্রথমে রোদে শুকিয়ে রাখা হয়। রোদে শুকানো এই পাঁপড় প্রয়োজন অনুযায়ী গরম তেলে ভাজলেই খাওয়ার উপযুক্ত হয়। তেলে ভেজে, বিট লবণ বা সস লাগিয়েও খাওয়া যায় এই পাঁপড় ভাজা।পাঁপড় শুকানো অবস্থায় কথা হয় পাঁপড় কারিগর আওয়াল মিয়ার সাথে তিনি বলেন, মাষকলাই, খেসারি ডাল থেকে তৈরি করা হয় পাঁপড়। এর সঙ্গে মেশাতে হয় চালের গুঁড়া, লবণ, কালিজিরা, খাওয়ার সোডা। আমেনা  নামে এক নারী জানান, পাঁপড় তৈরি ও শুকানোর কাজে নারীরাই মূলত যুক্ত বেশি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরালয়ের পাশের মাঠে প্রায় এক শতাধিক নারী পাঁপড় শুকায়। বছরের বৈশাখী ও চৈত্র—সংক্রান্তির মেলায় বেড়ে যায় পাঁপড়ের চাহিদা। এছাড়া বছরজুড়েই পাঁপড়ের চাহিদা থাকে।পাঁপড় শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় , এক একজন মহাজনের প্রায় ২৫ থেকে ৩০  জন শ্রমিক রয়েছেন। তারা পাঁপড় তৈরি, শুকানো ও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ১২ মাস পাঁপড় তৈরি করা হয়। বৃষ্টি হলে একটু কষ্ট করে শুকাতে হয়।দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের পাঁপড়ের বিভিন্ন দাম। এক নম্বর পাঁপড় ১৩০ টাকা কেজি। দু’নম্বর পাঁপড় ১১০টাকা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়। আবার তাদের অর্ডার মতো পাঠানোও হয়।এলাকাবাসি জানান  স্বাধীনতার পর  থেকেই দক্ষিণডিহি, নাওদাড়ি ও তত্তিপুর গ্রাম পাঁপড়পল্লি হিসেবে গড়ে উঠেছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা দিলে পাঁপড় শিল্পের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করা সম্ভব।