সাইফুল্লাহ তারেকঃ
নারী নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে গেলেও পুলিশের নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের কার্যক্রমের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে। কেএমপির বিভিন্ন থানার মতো খানজাহান আলী থানাতে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করে শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। দিনদিন এ সেবার পরিধি বাড়ছে। এতে হাজার হাজার অসহায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে। চলতি বছরে প্রায় ৪১২ জনকে এ সেবা দেওয়া হয়েছে। খানজাহান আলী থানার নারী ও শিশু ডেস্কের মহিলা কর্মকর্তা এস আই দোলা দে জানান, হেল্প ডেস্কে ৮০ শতাংশের বেশি অভিযোগ আসছে পারিবারিক বিষয় নিয়ে। স্বামী—স্ত্রীর মনোমালিন্য, নির্যাতন ও যৌতুকের বিষয়ে অভিযোগ আসছে বেশি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং পরকীয়া নিয়েও স্বামীদের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ করছেন গৃহবধূরা। এসব কারণে ভেঙে যাচ্ছে সংসার। নারী হেল্প ডেস্কের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অভিযোগকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাম—পরিচয় এবং অভিযোগের বিষয়টি গোপন রেখে তাকে আইনি সহযোগিতা করা হয়।পুলিশের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে কেএমপির ৮ থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৪৯ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।
গিলাতলার গৃহবধূ তাহেরা বেগম বলেন, তার মেয়েকে নির্যাতন করায় জামাতার বিরুদ্ধে থানায় হেল্প ডেস্কের সহায়তায় অভিযোগ করেন। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশের তৎপরতায় জামাতা ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান। পরে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।খানজাহান আলী থানা এলাকার মিরেরডাঙ্গা এলাকার কল্পনা বেগম তার বোন নিখোঁজের অভিযোগ দিতে এসেছিলেন থানায়। অভিযোগ কীভাবে লিখতে হবে, তা জানা ছিল না কল্পনার। থানায় পৌঁছানোর পর একজন নারী পুলিশ তাকে হেল্প ডেস্কে ডেকে নেন। সমস্যা শোনার পর অভিযোগ লিখে দেন। তিন দিনের মধ্যে তার বোনকে উদ্ধার করে পুলিশ। শুধু কল্পনা বেগম ও তাহেরা নন, থানায় স্থাপিত নারী ও শিশু সহায়তা হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে মিলছে নানা পুলিশি সেবা। কেএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) সোনালী সেন বলেন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে এবং আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে কেএমপির ৮ থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনাডাঙ্গা থানাতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার রয়েছে। খানজাহান আলী থানার ওসি মোঃ কামাল হোসেন খান বলেন, পারিবারিক বিষয় নিয়েই বেশি অভিযোগ আসে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে এ ধরণের অধিকাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এতে বহু সংসার ভাঙনের হাত রক্ষা পাচ্ছে। তবে ধর্ষণসহ গুরুতর অভিযোগগুলোর বিষয়ে থানায় মামলা করে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে। নারী ও শিশু সহায়তা ডেস্ক স্থাপিত হওয়ায় থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে হয়রানি কমেছে। গুরুতর অভিযোগ ছাড়া বেশিরভাগ পারিবারিক বিরোধ মামলা ছাড়াই সন্তোষজনক নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কেএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) সোনালী সেন খানজাহান আলী থানার শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদেরহেল্প—ডেস্ক পরিদর্শন করেন। হেল্প—ডেস্কে একজন এসআই, একজন এএসআই ও তিনজন নারী কনস্টেবল দায়িত্বপালন করছেন।
0 মন্তব্যসমূহ