Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

শ্রম আইন লঙ্গন করে খুলনার বেসরকারী জুট মিলগুলি বন্ধ রাখায় শ্রমিক—কর্মচারীদের মানবেতর জীবনযাপন


ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসুচি নিয়ে মাঠে নামছে শ্রমিক ফেডারেশন


সাইফুল্লাহ তারেক, শিল্পাঞ্চল (খুলনা) সংবাদদাতা : খুলনার শিল্পাঞ্চল এখন মৃত শিল্পাঞ্চলে পরিনত হয়েছে। বেসরকারি ব্যক্তিমালিকানা অধিকাংশ জুট মিল গুলো শ্রম আইন লঙ্গন করে বছরের পর বছর বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মিলগুলোর মালিকগণ প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭শ ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছে। এ সকল মিলের শ্রমিক — কর্মচারীদের প্রায় ১শ ৩০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে যা পরিশোধ না করে বছরের পর বছর মিলগুলো বন্ধ করে রেখেছে। এর মধ্যে কয়েকটি মিল আংশিক চালু রেখে শ্রমকি—কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে ফায়দা লুটছে এমন অভিযোগ শ্রমিক—কর্মাচরী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের। তাদের দাবী মিলগুলোর মালিক শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করায় অনাহারে—অর্ধাহারে প্রায় ৩ শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এবং শতশত শ্রমিক অর্থ অভাবে বিনাচিকিৎসায় ধুকেধুকে মৃত্যু পথযাত্রী। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনার দাবীতে ফেডারেশন ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসুচি নিয়ে মাঠে রয়েছে।বেসরকারি পাট, সুতা, বস্ত্রকল  শ্রমিক—কর্মচারী ফেডারেশন এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সৃুত্রে জানাগেছে, খুলনা অঞ্চলের সোনালী জুট মিলস, এ্যাযাক্স জুট মিলস, মহসেন জুট মিলস, শিরোমণি ট্রান্সওশেন ফাইবার্স প্রোসেসার্স লিমিটেড, জুট স্পিনার্স, আফিল, এফ আর, নওয়াপাড়া, সাগর, সুপার, আয়ান, স্পেলাইজিষ্ট, মন্ডল, গ্লোরি, সিডলু, আহাদসহ ছোট—বড় মোট ২২টি জুট মিল রয়েছে। এর মধ্যে এ্যাযাক্স, মহসেন, সম্পুর্ণ বন্ধ রয়েছে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সোনালী, শিরোমনি জুট স্পিনার্স, এফ আর, স্পেশালিজিস্ট  আয়ান, সুপার, গ্লোরী, মন্ডল, সিডলু নওয়াপাড়া , সাগর জুট মিল, ও আহাদ জুট মিল। এ সকল জুট মিলের মধ্যে শুধুমাত্র ৭টি ব্যক্তিমালিনা জুট মিলের মালিকদের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৭শত ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। এ সকল মিলের শ্রমকি—কর্মচারীদের মালিক কর্তপক্ষের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ১শত ৩০কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে শতশত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে ঋণের টাকা অন্যখাতে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মিলগুলো পুর্ণাঙ্গ ভাবে চালানোর কোন পরিকল্পনা লক্ষ করা যাচ্ছেনা। এ সকল জুট মিলের মধ্যে সোনালী, এ্যাযাক্স এবং মহাসেন, আফিল, জুটস্পিনার্সসহ কয়েকটি জুট মিলের প্রায় ৩ শতাধিক  শ্রমিক অনাহারে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করেছে। অনেকে টাকার অভাবে বিনাচিকিৎসায় ধুকেধুকে মৃত্যু পথযাত্রী। এছাড়া মিলগুলোর প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক পরিবার অত্যান্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। শ্রমিক—কর্মচারীদের বকেয়া মজুরী পরিশোধ. মিল চালুসহ বিভিন্ন দাবীতে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসুচি নিয়ে মাঠে রয়েছে ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ।
খুলনাঞ্চালের বেসরকারি ব্যাক্তিমালিকানা জুট মিলের মধ্যে শিরোমনি শিল্পাঞ্চালের বন্ধকৃত মহসেন জুট মিল ১৯৬৯ সালে চালু হলে ১৯৭২ সালে মিলটি সরকারি করন করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে পুনরায় ব্যাক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে ১৭ জুলাই মিলে স্থায়ী এবং অস্থায়ী মোট ১২শত শ্রমিক—কর্মচারীকে একযোগে ছাটাই করা হয়। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে এ সকল শ্রমিক—কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। সুত্র বলছে মিলটি রুপালী ব্যাংকের কাছে প্রায় ২০/২৫ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। শিল্পাঞ্চালের বন্ধকৃত জুট স্পিনার্স ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে। মিলের মোট শ্রমিক—কর্মচারীর সংখ্যা ১৭শত ৩০ জন। মিলটির মালিক মো. সামছুজ্জোহা কোন নোটিশ ছাড়াই গত ২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিলটি অত্যান্ত কৌশলে উৎপাদন বন্ধ রেখে অঘোষিত বন্ধ করে রাখেন যদিও মিলটি বর্তমানে নামমাত্র চালু রয়েছে। মিলের শ্রমিক—কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। মিলটি জনতা ব্যাংকের নিকট কয়েক কোটি টাকা ঋণ রয়েছে বলে জানাগেছে। মীরেরডাঙ্গা শিল্পাঞ্চালের ব্যাক্তিমালিকানা এ্যাযাক্স জুট মিল ১৯৭২ সালে প্রথম সরকারি ভাবে চালু করা হয়। পরে মিলটি ব্যাক্তিমালিকানা ছেড়ে দেওয়া হয় বর্তমানে বন্ধকৃত এই মিলের শ্রমিক—কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার এদের মধ্যে কিছু কিছু শ্রমিকের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হলেও এখন শ্রমিক—কর্মচারীদের প্রায় ১২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে । মিলটি সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে বলে ফেডারেশন সুত্র জানিয়েছেন। এই অঞ্চলের এক সময়ের সুনামধণ্য সোনালী জুট মিলস ১৯৭২ সালে চালু হলে ৪ হাজার ৭শত জন শ্রমিক—কর্মচারীর পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন মিলটি। পরে মূল মালিক জহুরুল হকের মৃত্যুর পর মিলটির অব্যাবস্থাপনায় মিলে ধ্বস নামতে শুরু করে শ্রমিক ছাটায়ের মধ্যে দিয়ে চলে মিলটি। মিল মালিক ইমদাদুল হক বুলবুল বিভিন্ন মামলায় ফেরারী থাকা অবস্থায় করোনাকালীন সময়ে মারা যান , নামমাত্র মিলটি বর্তমানে  চালু রয়েছে । মিলের শ্রমিক—কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। খুলনা অঞ্চলে বেসরকারি জুট মিলগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ঋণ গ্রস্থ হয়ে পড়েছে এই মিলটি। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে উত্তরা, সোনালীসহ কয়েকটি ব্যাংকের প্রায় ২শত ৭০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। শিরোমনির আফিল জুট মিলস ১৯৭২ সালে সরকারি ভাবে চালু হয় পরবর্তিতে মিলটি ব্যাক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। মিলে শ্রমিক—কর্মচারী সংখ্যা স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে ছিলো ৮শ ৬০ জন । মিলটি কিছুদিন আগে হ্যামকো কোঃ কিনে নেয় এবং কয়েকজন শ্রমিক এর পাওনাও পরিশোধ করে মালিকপক্ষ। বর্তমানে বেসরকারী এ জুট  মিলগুলো দিনের পর দিন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা জীবন জীবিকার তাগিদে অনেকে ভ্যান—রিক্সা , ইজিবাইক চলিয়ে সংসার চালাচ্ছে। অনেকে আবার দিন মুজুরের কাজ বেছে নিয়েছে। যারা কিছুই করতে পারছেনা তারা ধুকে ধুকে মরছে। দীর্ঘদিন বন্ধ মহসেন জুট মিলের কর্মচারী  লুৎফর রহমান , মিল আর চালু হওয়ার কোন সম্ভবনা দেখিনা। দীর্ঘ ২০/২৫ বছর চাকুরী জীবনের শেষ সম্বল পাওনা টাকা পেলেও কিছু একটা করে সংসার চালাতে পারতাম। অভাব অনাটনের সংসারে মিলের ্টাকা না পেয়ে বর্তমানে খুব কষ্টে  সংসার চলছে। সোনালী জুট মিলের শ্রমিক কালাম  বলেন, মিলর তাতে কাজ করতে করতে জীবন যৌবন সব শেষ করে দিয়েছি। এক সময়ে মিলের প্রাণ ছিলো এখন মিলের প্রাণ নাই মিলটি শ্রমিক নাই শ্রমিকদের পাওনার কোন খবর নাই। মালিকপক্ষের  কাছে প্রায় দুই লক্ষ টাকা পাবো টাকাও দেয়না কাজও দেয়না তাই দিন মুজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এ্যাজাক্স জুট মিলের  শ্রমিক সালাম  বলেন সারা দিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনি করে দিন মুজুরের কাজ করে বিকালে মিল চালু এবং বকেয়া পাওনার দাবীতে বেশ কিছু দিন আন্দোলন করতে করতে নেতারা হঠাৎ আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছে। বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ্টাকা পয়সা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেও কোন কাজ হয়নি। মিলে কাজ করার কথা আমরা ছেড়ে দিয়েছি এখন আমরা শুধু আমাদের বকেয়া পাওনা টাকা চাই। শিরোমনি  বাজারের ব্যবসায়ী জয়নাল বলেন, এক সময়ে বাজারের বেচা—কেনায় অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই ভালো ছিলো কিন্তু এখন শিল্পাঞ্চলের মিল গুলো বন্ধ থাকায় ফুলতলা থেকে ফুলবাড়ীগেট পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ী ভালো নেই, ব্যবসা বানিজ্য চলছে মন্দা ।বেসরকারি পাট, সুতা, বস্ত্রকল  শ্রমিক—কর্মাচরী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল খান  বলেন, খুলনাঞ্চালের বেসরকারি জুট মিল গুলোর মালিকরা ব্যাংক থেকে শতশত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মিলগুলোকে বন্ধ অথবা নামেমাত্র চালু রেখে শ্রমিক—কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করায় হাজার হাজার শ্রমিকের পরিবার অত্যান্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। টাকার অভাবে বিনাচিকিৎসায় ৩ শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে মিল গুলোর যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সুষ্ট ও সুন্দর ভাবে মিল চালানো নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মিল গুলোর শ্রমিক—কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা আদায়ই এখন বড় চ্যালেঞ্জ তবে শ্রমিক এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এক থাকলে আন্দোলনের মাধ্যমে সব কিছুই সম্ভব হবে। তিনি বলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি  ও খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান এর  আশ্বাসে আমরা আমাদের আন্দোলন কর্মসুচি সাময়িক স্থগিত করি। গত সম্পায় আমরা শ্রম প্রতিমন্ত্রীর  সাথে বৈঠক করেছি তিনি ও শ্রম পরিচালক যথেষ্ট আন্তরিক রয়েছেন ।দ্রততম  সময়ে আমরা শ্রমিকদের দাবীসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিবো। আলোচনা ফলোপ্রসু হলে ভালো অন্যথায় আমরা ফেডারেশনের মিটিং করে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসুচি নিয়ে রাজপথে নামবো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

রামপাল

5/রামপাল/feat-tab

সাম্প্রতিক

5/সাম্প্রতিক/feat-tab

বাগেরহাট

5/বাগেরহাট/feat-tab

Facebook

Search This Blog

এখানে সার্চ করুন

জাতীয়

4/জাতীয়/grid-big

রাজনীতি

6/রাজনীতি/grid-small

সংবাদ শিরোনাম


Ads

Ads

Ads

Ads

Ads

Ads

সর্বশেষ

3/recent/post-list

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক/feat-big