মুফতী মাওলানা আবুল কাশেম
আরবি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাসের নাম হচ্ছে ‘মহররম’। মহররম মাসের দশম দিনকে বলা হয় ‘আশুরা’। আরবি ‘আশারা’ হচ্ছে দশ। সেই ‘আশারা’ থেকেই এসেছে ‘আশুরা’ তথা মহররম মাসের দশ তারিখ। পৃথিবীতে মহরমের দশ তারিখে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি ঘটেছে। যে কারণে এই তারিখটি ইহুদি, নাসারা, মুসলিম সকলের কাছে খুবই সম্মানিত। আজ আমরা কুরআন হাদিসের আলোকে আশুরা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন। সেই চার মাসের একটি হলো মহররম।
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন।” (সুরা: আত তাওবাহ, আয়াত: ৩৬)
উপর্যুক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘তিনটি মাস ধারাবাহিক; আর তাহলো জিলকদ, জিলহজ এবং মহররম। আর অপরটি হলো রজব। যা জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি)
সুতরাং কুরআন হাদিসের আলোকে ইসলামে মুহররম একটি সম্মানিত মাস। আর এই মাসের দশম দিন তথা আশুরার গুরুত্বও অপরিসীম।
পবিত্র হাদিস থেকে জানা যায় মুহররম এবং আশুরার দিনে ইবাদত বন্দেগির অপরিসীম ফজিলত রয়েছে।
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রমাদান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহররম মাসের সাওম (আশুরার সাওম) এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাত্রের সালাত।” (সুনানে আন-নাসায়ী ১৬১৩, ইবনু মা-জাহ ১৭৪২)
আবূ কাতাদাহ আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাহর দিনে সওম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন-এর দ্বারা বিগত ও আগত এক বছরের গোনাহ (পাপ) মোচন হয়। “আশুরাহর দিনের সওম পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন-বিগত এক বছরের পাপ মোচন হয়।” (বুলুগুল মারাম ৬৮০, মুসলিম ১১৬২, তিরমিযী ৬৭৬, নাসায়ী ২৩৮২, আবু দাউদ ২৪২৫, ইবনু মাজাহ ১৭১৩, আহমাদ ২২০২৪)
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- “রমাদান মাসের সাওমের পরে আল্লাহ্ তা’আলার মাস মুহররমের সাওমই সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ।” (তিরমিজি ৭৪০)
উপর্যুক্ত হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, রমাদানের পরে মুহররম মাস এবং এই মাসে পালন কৃত সাওমের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা এই মাসের সাওমের বিনিময়ে আল্লাহ পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন। আর মুহররম মাসের দশম দিন তথা আশুরা হচ্ছে ফজিলতপূর্ণ দিন। যেদিনে সাওম পালনের কথা হাদিসে এসেছে।
0 মন্তব্যসমূহ