সাইফুল্লাহ তারেক, আটরা গিলাতলা প্রতিনিধি: চুরির ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বাসা—বাড়ি থেকে শুরু করে দোকান—পাট, গোডাউন—গ্যারেজ, সব খানেই কম বেশি ছিঁচকে চোর অথবা গ্রিল কাটা চোরের সংঘবদ্ধ চুরির ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, চোরেরা এতবেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে চুরির সময় কেউ দেখে ফেললে তাকে আঘাত করছে। এক শিক্ষার্থী থাকেন গিলাতলা কেডিএ আবাসিক এলাকার তিনতলা ফ্লাট বাসায় ম্যাচে। একরুমে তিনজন থাকেন। ফজরের আযানের একটু আগে হঠাৎ টের পেয়ে দেখেন, তিন জনের চোক ফাঁকি দিয়ে চোর তার মায়ের কষ্টের টাকায় কেনা ল্যাপটপ সহ, মোবাইল, ম্যানিব্যাগ জানালার গ্রিল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। উপস্থিত চিৎকার করেও চোখের সামনে দিয়ে চোর পালিয়ে যায়।মিরেরডাঙ্গা এলাকায় দারোয়ানের চাকরি করেন কামরুল (৪৫)।সপ্তাহ খানেক আগে একদিন রাত আনুমানিক ২টার সময় কামরুল লাইট মেরে দেখতে পান, দুজন লোক আবাসিক এলাকার পিছন দিক দিয়ে ৪ তলা বাসার উপরে উঠার চেষ্টা করছে। লাঠি হাতে দৌঁড় দিয়ে চোরকে যেই না ধরতে গেছেন কামরুল, চোর তার কোমরে থাকা চাকু জাতীয় ধারালো অস্ত্র বের করে এলোমেলো ভাবে মারতে থাকে কামরুলের , শরীরে এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মাটিতে। তাৎক্ষণিক টের না পেলেও একটু পরে তিনি দেখতে পান তার শরীরের বিভিন্ন যায়গা থেকে রক্ত পড়ছে। সেলাইয়ের প্রয়োজন না হলেও জখমের পরিমান বেশি হওয়ায় সুস্থ হতে বেশ বেগ পেতে হয় এই দারোয়ানকে। এদিকে হঠাৎ করেই খানজাহান আলী থানা এলাকার গিলাতলা, মাত্তমডাঙ্গা, মশিয়ালী, ইষ্টর্ানগেট, শিরোমনি , মিরেরডাঙ্গা, সেনপাড়া , খানবাড়ী এলাকাতে ছিচকে চোর বৃদ্ধি পেয়েছে এরা নেশার টাকা জোগাড় করতে রাতের আধারে মানুষের বাসা বাড়িতে গিয়ে হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই চুরি করে নিয়ে আসছে । ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাসা বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়লেও রাস্তা—ঘাটে—মোড়ে তেমন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন না করার কারণে চোরদের উৎপাত বেড়ে গেছে।চুরির ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে বেশিরভাগ সময় কোন ফলাফল না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতে উৎসাহ পায় না। ফলে বেশিরভাগ চুরির ঘটনা নীরবে থেকে যায় এবং পাড়া মহল্লায় চোরের সংঘবদ্ধ চক্র বার বার চুরি করতে উৎসাহ পায়। পাড়া মহল্লায় নিয়মিত টহল, চুরির মামলায় দ্রুত তদন্ত ও বিচার এবং থানায় রেকর্ডধারী যে সমস্ত ছিঁচকে চোর, গ্রিল কাটা চোর এবং সংঘবদ্ধ চোর—ডাকাতের তালিকা আছে তার সূত্র ধরে গ্রেফতার অভিযান চালালে চুরির ঘটনা দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব।অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পুলিশ পাড়া মহল্লায় টহল দিচ্ছে, আগের তুলনায় আরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, সোর্সদের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত চোরের ব্যাপারে নজরদারি আছে। ছিঁচকে ও গ্রিল কাটা চোরদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চোরদের ধরতে মাঝে মাঝে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার কথাও বলছেন তারা। সর্বোচ্চ পরিমান সতর্ক থাকার পরেও কিছু কিছু চুরির ঘটনায় দায় এড়ানো যায় না বলে স্বীকার করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেক জায়গায় সাধারণ ডায়েরি করা সাপেক্ষে চোর এবং চুরির মালামাল উদ্ধার করার অনেক রেকর্ড আছে বলেও মনে করছেন তারা।খানজাহান আলী থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ^াস বলেন, আমাদের নিয়মিত টহল আছে, নিয়মিত যেসব অভিযোগ আসছে সেগুলো তদন্ত করছি। লিস্টেড যেগুলো চোর আছে, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আছে, আর্থিক সংগতি আছে তাদেরকে উৎসাহিত করছি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার জন্য। এরইমধ্যে আমাদের হাতে অনেক সংঘবদ্ধ চোর—ডাকাতের তালিকা আছে। যাদের উপর আমদের দৃষ্টি আছে। অভিযোগের এ ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।
0 মন্তব্যসমূহ