অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে সুনয়না। চারপাশের এতো অন্যায়,অনিয়ম,অস্বচ্ছতায় ভরা পরিবেশ দেখতে আর ভালো লাগেনা তার।একদিন মাথায় একটা বুদ্ধি আসে তার।সে ভাবে,যদি একটা স্বচ্ছ কাচের চশমা পরা যেত তাহলে হয়তো সবকিছু সঠিক এবং স্বচ্ছ দেখা যেত।
স্বচ্ছ কাচের চশমা বানানোর উদ্দেশ্যে বের হয় সে।পথে সিএনজিতে দেখা হলো ফটিক চাচার সাথে।গ্রামের একজন বেশ পুরনো গাজা বিক্রেতা তিনি।অনেকবার ধরাও খেয়েছেন। তার ভাষ্যমতে,জেল তার মামা বাড়ি।
সিএনজি থেকে নেমে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো সে।হঠাৎ চোখ পড়লো সামনের গলিতে গ্রামের চেয়ারম্যান এর লুঙ্গির দিকে!গতদিনে সরকার থেকে গরীব -অসহায় দের জন্য যে লুঙ্গি দেওয়া হয়েছিল তার একটি চেয়ারম্যান পরে আছে!
এর মধ্যেই বাস এসে গেছে।বাসে উঠে বসলো সুনয়না।কিছু দুরে যাওয়ার পর পাশে এসে বসলো বাবার বয়সী একজন লোক।কিছুক্ষণ পর পকেট থেকে স্মার্ট ফোন বের করে ইউটিউবে লাউড দিয়ে (যতটা লাউড দিলে শোনা যায়) বাসে বসে কোরিয়ার পেনিস পার্ক দেখছে আর সুনয়নার দিকে তাকাচ্ছে!স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে ওনার কাজটি কি অভদ্রতা বা ইভটিজিং এর মধ্যে পড়ে কি না তার জানা ছিল না বিধায় বাস থেকে নেমে হেটে হেটে চক্ষু হাসপাতালে পৌছালো সে।
সিরিয়াল কাটলো।সুন্দর, স্বচ্ছ কাচ দিয়ে একটি চশমা বানিয়ে নিল এবং চোখে দিল।বাহ!সবকিছু বেশ স্বচ্ছ স্বচ্ছ দেখাচ্ছে। এবার ফেরার পালা।
বাসের জন্য অপেক্ষা না করেই হাটা শুরু করলো সুনয়না।প্রায় পাঁচ টাকার পথ হেটে পার করলো সে।হঠাৎ প্রকৃতির ডাক পড়লো! প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সে একটা ক্লিনিকে ঢুকলো। চশমাটা চোখেই ছিল! ক্লিনিকে ঢুকেই চোখ তার চড়কগাছ! ডাক্তার - নার্স এর পরিবর্তে শুধু পুলিশ আর পুলিশ! পরে জানতে পারলো-হাসপাতাল ও হাসপাতালের ডাক্তার অবৈধভাবে চালাচ্ছিল ক্লিনিকটি।
অবশেষে নিজের গ্রামে ফিরলো সুনয়না।দেখলো কয়েকটা গাঁজাখোর জনসম্মুখে গাজা টানছে!
সুনয়না ভাবে- 'সমাজটাই যেখানে অস্বচ্ছ সেখানে স্বচ্ছ কাচ চোখে দিয়ে কিভাবে,কোন জিনিসটায় মানুষ স্বচ্ছতা খুজে পায়!? সুনয়না স্বচ্ছ কাচ এবং অস্বচ্ছ সমাজের মূলোৎপাটন চায়!
"অস্বচ্ছ এই নগরীতে স্বচ্ছ কাচের চশমা পরে স্বচ্ছতা খোজা এবং খুজে পাওয়া অস্বচ্ছ ভাবেই সম্ভব হয়তো!"
~সুমিতা খাতুন
0 মন্তব্যসমূহ